-->
শিরোনাম

মুখ থুবড়ে পড়েছে বরিশালের কংক্রিট ব্লক শিল্প

এসএলটি তুহিন, বরিশাল
মুখ থুবড়ে পড়েছে বরিশালের কংক্রিট ব্লক শিল্প
বরিশালের আভা কংক্রিট ব্রিকস ফ্যাক্টরি

পরিবেশ রক্ষা ও সাশ্রয়ী মূল্যে অবকাঠামো নির্মাণে ইটভাটার বদলে কংক্রিট ব্লক নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে বরিশাল জেলার উজিরপুর ইচলাদী রাখালতলা গ্রামে সিমেন্ট বালু, নুড়ি পাথরের সংমিশ্রণে কংক্রিট সলিড ব্লক , ৬ হোল কংক্রিট ব্লক , পেভার ব্লক , ৩ স্টার পেভার ব্লক , পেভার টাইলসে তৈরির ফ্যাক্টরি গড়ে তোলা হয়েছে।

 

কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও এলাকায় এসব ব্লক কিনতে আগ্রহ না থাকায় প্রকল্পটি প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকারের ধারাবাহিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে একসময় এই খাতাটি লাভজনক হিসেবে দাঁড়াতে পারত। নয়তো ফসলি জমির মাটি কেটে উর্বরা শক্তি নষ্টের সঙ্গে ভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ চলতেই থাকবে।

 

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আভা কংক্রিট ব্রিকস প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হাজি গোলাম মোস্তফা জানান, বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়ে নির্মিত ইটভাটা ফেলে রেখে নতুন করে অর্থলগ্নির মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লক প্রকল্প করেছি। মূলত পরিবেশের দূষণ রোধ ও কৃষি জমির মাটির উর্বরতা রক্ষায় সরকারের উদ্যোগে সহযোগিতা করতেই এই পদক্ষেপ।

 

কিন্তু যাদের নির্দেশনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছি, বিপণনে তাদের কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। এ কারণে দুই বছর ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে। কেননা আমার কারখানায় প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার পিস কংক্রিট ইট তৈরি করা যায়। কিন্তু তা করা সম্ভব হচ্ছে না। দৈনিক বিক্রয় হয় মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ পিস।

 

তাই সক্ষমতা অনুযায়ী ইট তৈরি করলে উৎপাদিত মাল মাসের পর মাস পড়ে থাকছে। এতে পুঁজি আটকে যাচ্ছে। এ কারণে উৎপাদন কমিয়ে দিতে হয়েছে। কিন্তু ৫ থেকে ৭ জন শ্রমিককে নিয়মিত পুরো মজুরিই দিতে হচ্ছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি। বিনিময়কৃত অর্থ উঠে না আসায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।

 

তিনি বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো এদেশে বাস্তবায়নকৃত নির্মাণ প্রকল্পে ব্লক ব্যবহার করলেও সরকারি বিভিন্ন আবাসন, আশ্রয়ণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণসহ কোনো প্রকল্পেই নিজেদের নির্দেশনা কার্যকর করা হচ্ছে না। অথচ সরকার যদি এক্ষেত্রে একটু সচেষ্ট হয়, তাহলে আমরা যেমন উপকৃত হবো, তেমনি কর্মসংস্থানও হবে। সেই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষার জন্য কার্যকর সফলতাও আসবে।

 

তিনি আরো বলেন, এজন্য আপাতত শুধু সরকারি প্রকল্পগুলোতেই কংক্রিট ব্লক ব্যবহার নিশ্চিত করলেই সৃষ্ট অচলাবস্থা দূর হবে। এভাবে সরকারি কার্যক্রমের ফলে সাধারণ মানুষের মাঝেও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে। তাছাড়া মাটির ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহারে গ্রাহকও লাভবান হবেন। কেননা ইটের চেয়ে ব্লক মূল্য সাশ্রয়ী, মানসম্পন্ন ও দীর্ঘস্থায়ী।

 

আভা কংক্রিট ব্রিকসের পিএসসি ইঞ্জিনিয়ার মাহামুদুল হাচান বলেন, কংক্রিটের এই ব্লক নির্মাণে ব্যবহার করা হয় ২.৫ এফএম সিলেট বালু, ১.৫ এফএম লোকাল বালু, ওপিসি সিমেন্ট, হাইগ্রেড এডমিক্সার, কংক্রিট ও নুড়ি পাথর।

 

এছাড়া গুণগত মান ঠিক রাখতে উৎপাদনের আগে-পরে ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে এর পিএসআই নির্ণয় করা হয়। বরিশাল জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। উজিরপুর এই উপজেলাতে অনেক ইটভাটা রয়েছে। অধিকাংশ ভাটাগুলোতে কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করা হয়। এসব দিক বিবেচনা করেই ইচলাদী রাখালতলা গ্রামে পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লক ফ্যাক্টরি গড়ে হয়েছে।

 

বর্তমানে ফ্যাক্টরিতে ৭ থেকে ৮ জন শ্রমিক কাজ করছেন। উন্নতমানের হাইড্রোলিক মেশিনে তৈরি হচ্ছে ব্লক । তৈরি সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সিমেন্ট, বালু ও ৪ মিমি পাথরের কণা। হলো, সলিড, ইউনিপেভারসহ পাঁচ ধরনের ব্লক তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে সবার নজর কাড়ছে হলো ব্লক । হলো ব্লকের ওজন কম, এর আকার-আকৃতিও ভালো।

 

ফলে অধিকতর ভূমিকম্প সহনীয় এবং গাঁথুনি ও প্লাস্টারের খরচ কম। এর ভেতরে ফাঁকা থাকার ফলে গরম ও শীতে ঘর-আরামদায়ক ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী হয়। ব্লকের ওজন কম ও সাইজে বড় হওয়ায় কম জনবল দিয়ে অতি দ্রুত সময়ে কাজ করা যায়। লবণাক্ততা না থাকার কারণে দেয়ালের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ নেই। তাই সবাইকে কংক্রিট ব্লক ব্যবহারের আহব্বান রইল।

 

বরিশাল গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, সরকারের পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের যে পরিকল্পনা রয়েছে, তাতে আগামী ২০২৫ সালের পর সরকারি কোনো কাজে পোড়ামাটির ইটের ব্যবহার থাকছে না। টেকসই উন্নয়নের দিক বিবেচনা করে ইটের বিকল্প হিসেবে ইউনি ব্লক দিয়ে উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছেন সরকার। তিনি বলেন, তাই সরকারের বিধি মোতাবেক অনুসারে আমাদের সকল কাজে এ ইউনি ব্লক ব্যবহার করা হবে।

 

পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক মিয়া জানান, কংক্রিট ব্লক এটি পরিবেশবান্ধব ব্লক । আমরা ইতোমধ্যে জেলায় আরো কয়েকটি কংক্রিট ব্লক কারখানা নির্মাণের আবেদন পেয়েছি। জেলায় কংক্রিট ব্লক কারখানা গড়তে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছি।

 

বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রচলিত ইট ভাটাগুলো বন্ধ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কংক্রিট ব্লক পরিবেশবান্ধব হওয়ায় ভালো ভূমিকা রাখবে। জেলা প্রাশসনের পক্ষ থেকে কংক্রিট ব্লক কারখানার মালিকদের উৎসাহিত করতে সকল প্রকার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version