-->
শিরোনাম

সাইকেল চালিয়ে শান্তির বাণী প্রচার করেন তিনি

মীর বাবুল, ময়মনসিংহ
সাইকেল চালিয়ে শান্তির বাণী প্রচার করেন তিনি
মাস্টার মাখন

সাইকেল চালিয়ে মানুষের মাঝে শান্তির বাণী পৌঁছানোর নেশায় পড়েছেন শেখ মো. আব্দুল খালেক (মাস্টার মাখন)। ১৯৮৩ সালের ২৫ জুলাই দিনাজপুরে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তখন তিনি ২৫ বছরের টগবগে যুবক। এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও সাইকেলের চাকা ঘুরিয়ে চলেছেন এক জেলা থেকে অন্য জেলায়।

 

মাখন মাস্টার তার সাইকেলে কাগজ টাঙিয়ে লিখে রাখেন বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক প্রচার। তার প্রচারের বাণীগুলো হচ্ছে নেশা ছাড়–ন সুস্থ থাকুন, শিরক হিংসা মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকুন, বিশ্ব মানবিক সম্প্রীতি বজায় রাখুন, জিহবার ও লজ্জাস্থান হেফাজত করুন, দেহ-মন পবিত্র ও প্রফুল্ল রাখুন, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুন, দুনিয়া ও অনন্তকালের প্রশান্তি লাভ করুন, মানুষ মরতে পারে কিন্তু নীতি আদর্শ কখনো মরে না, স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মসজিদে মোবাইল বন্ধ রাখুন, গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল বন্ধ রাখুন, সহি-শুদ্ধ নামাজ বেহেশতের চাবি, অতিরিক্ত কথা বলা মিথ্যার শামিল, জনসমক্ষে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন, হাঁচি-কাশি ও শিষ্টাচার মেনে চলুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, প্রাণঘাতী করোনার ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকুন ইত্যাদি।

 

বর্তমানে বয়সের ভারে সাইকেল চালাতে কষ্ট হয় মাস্টার মাখনের। তবুও অদ্ভুত এ নেশা ছাড়তে পারেন না। এদিকে পেটে দুমুঠো ভাতের জোগাড় করতে চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ময়মনসিংহ শহরের জয়নুল আবেদিন পার্ক, স্টেশন রোডসহ বিভিন্ন এলাকার অব্যবহৃত জায়গায় পর্দার ছাউনি ও ছোট বেঞ্চ পেতে বড় ছেলে শেখ নাজমুল হুদা নাসিম মিশনকে নিয়ে অস্থায়ীভাবে চায়ের দোকান করেন। পায়েস দিয়ে তৈরি এই চায়ের স্বাদটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

 

কেউ চা খেতে এলে লিফলেটে লিখে রাখা শান্তির বাণী প্রচার করেন মাস্টার মাখন। ভালোবাসার সেই সাইকেলটা সব সময় সঙ্গেই রাখেন তিনি। ফলে সাইকেলে বহন করা সচেতনতামূলক লেখা যে কেউ দেখে আকৃষ্ট হয়ে পড়তে শুরু করেন। ছেলে মিশন একজন চিত্রশিল্পী। বাবার কাজকে পছন্দ করে বিভিন্ন দেয়ালের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সচেতনতার বাণী লিখে রাখেন তিনি।

 

মাস্টার মাখন জানান, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের রূপনগর এলাকায় জন্ম তার। ১৯৭৪ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। তবে নানা কারণে পরীক্ষা দিতে পারেননি। বাবা খাদ্য অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের অফিসে হেড ক্লার্ক ছিলেন। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় চাকরি করেছেন। সেই সুবাদে বাবার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকার সুযোগ হয়েছে। বর্তমানে ময়মনসিংহ নগরীর আকুয়া মোড়লবাড়ি এলাকার একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী, তিন ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে এখানেই বসবাস।

 

তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালে দিনাজপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসককে বলেছিলাম, আমি সারা দেশে শান্তির বাণী প্রচার করার উদ্যোগ নিয়েছি। তখন তিনি খুশি হয়ে আমাকে সরকারি ডাকবাংলোয় থাকা খাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তখন নিজেকে নিয়ে গর্ব করতাম। কারণ, মানুষের কল্যাণে এমন কাজ সবাই করতে পারে না। দিনাজপুরে সাইকেলে বিভিন্ন সচেতনতামূলক শান্তির বাণী কাগজে লিখে সাইকেল চালিয়ে দিনাজপুর শেষ করে রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রচার করে ময়মনসিংহে চলে আসি।

 

পরে ধীরে ধীরে সারা দেশে সাইকেল চালিয়ে শান্তির বাণী প্রচার করছি। তিনি আরো বলেন, আমি সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় অনেকে ভিড় করে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা আমাকে বেশি পছন্দ করে। আমার সচেতনতামূলক লেখাগুলো সবার পরিচিত বাণী হলেও খুব আগ্রহ প্রকাশ করেই অনেকে পড়ে। এতে মনে তৃপ্তি পাই।

 

মাস্টার মাখন বলেন, শান্তির বাণী প্রচার করে সংসার চালানো যায় না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। ফলে মাঝেমধ্যে চাকরি করেছি ঢাকায় বিভিন্ন কোম্পানিতে। দুই বছর আগে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় চাকরি ছেড়ে চলে আসি। এখন সাইকেল চালিয়ে সচেতনতার বাণী প্রচার করার পাশাপাশি ছেলেকে নিয়ে পায়েস দিয়ে তৈরি চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। আমাকে সরকারিভাবে সহায়তা করা হলে উপকৃত হতাম।

 

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, তার সম্পর্কে কিছুই জানি না। তাই খোঁজখবর নেয়া হবে। প্রয়োজন হলে আর্থিক সহায়তা করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version