উপজেলায় ভরা শ্রাবণ মাসেও কাক্সিক্ষত বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা আমন ধান রোপণ করতে পারছেন না। তীব্র রোদের প্রভাবে মাঠ একেবারে শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছে। মনে হবে যেন কোনো ধু-ধু চর। যে সময়ে মাঠেঘাটে আমন ধানের সবুজের সমারোহ থাকার কথা অথচ সেই মাঠগুলোতে এখন রোপা আমন ধানের পরিবর্তে গরু, ছাগলের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। দুই-এক এলাকায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিয়ে চাষ শুরু হলেও বেশিরভাগ এলাকায় কৃষকরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
বৃষ্টির আশায় প্রহর গুণছেন কৃষকরা। এমনভাবে আর কয়েকদিন অনাবৃষ্টি চলতে থাকলে চলতি মৌসুমে উপজেলায় আমন ধান লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে নির্ধারিত সময়ে চাষ শুরু করতে না পারায় ধানের চারাগুলো বীজতলাতেই বড় হয়ে যাচ্ছে। অনেক চারা আবার শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে যেন দুশ্চিন্তার শেষ নেই কৃষকদের। বৃষ্টি না হওয়ায় কয়েকটি এলাকায় আবার শ্যালো বা ডিপ (গভীর নলকূপ) চালু করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বদলগাছী উপজেলায় রোপা আমন লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর। বদলগাছী উপজেলার কৃষকরা শ্রাবণের শুরু থেকে পুরোদমে রোপা আমন চাষাবাদ শুরু করে, আর শ্রাবণ মাস শেষ হওয়ার পূর্বেই আমন রোপণের কাজ শেষ হয়। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে এখন পর্যন্ত উপজেলায় মাত্র ৭৩০ হেক্টর জমিতে আমন রোপণ করা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ১০ ভাগও অর্জন সম্ভব হয়নি। অবশ্য যা অর্জন হয়েছে তা উপজেলার নিম্নাঞ্চল বিলাশবাড়ী ইউপির বিল এলাকায়। এ ছাড়া উপজেলার কোথাও কোনো রোপা আমন শুরু করতে পারেনি।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, শ্রাবণের শুরুতে বৃষ্টির পানি দিয়েই রোপা আমন চাষাবাদ শুরু করে আর শ্রাবণ মাস শেষের পূর্বেই রোপণ শেষ করে। কিন্তু চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারণে এখন পর্যন্ত কেউ জমিতে আমন চারা রোপণ করতে পারেননি। বর্তমানে আমন চারার বয়স হওয়ায় ও প্রচন্ড তাপদাহে পুড়ে যেতে বসেছে। কৃষকরা কোনো রকমে সেচ দিয়ে বীজতলা সংরক্ষণ করছেন এবং এক ফোঁটা জলের জন্য চাতক পাখির মতো মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। কবে নাগাদ কাক্সিক্ষত বৃষ্টি হবে আর পুরোদমে মাজায় গামছা বেঁধে মাঠে নেমে আমন চাষাবাদ শুরু করবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাবাব ফারহান বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে উপজেলায় এখন পর্যন্ত রোপা আমন তেমনভাবে চাষাবাদ শুরু হয়নি। সবাই বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু এভাবে আর বসে থাকলে চলবে না। গভীর-অগভীর নলকূপ দিয়ে সেচের ব্যবস্থা করে আমন ধান রোপণ শুরু করতে হবে। এ ছাড়া বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় থাকলে চলতি মৌসুমে বদলগাছী উপজেলায় আমন ধান উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়বে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য