ময়মনসিংহ শহরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য স্থাপনা। ফলে শহরের সড়কগুলোকে এক ইঞ্চিও বড় করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। নগরীর খালগুলোর দুই পাশ দখল হয়ে গড়ে উঠেছে বাসাবাড়িসহ নানা অবৈধ স্থাপনা। এ কারণে বৃষ্টির পানি শহর থেকে গড়িয়ে খালে নামতে পারে না। ময়লা-আবর্জনা ড্রেনে (নালা) ফেলার কারণেও পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ফলে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নগরীর এই জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে। ৩৩টি ওয়ার্ডে ইতোমধ্যে সড়ক যোগাযোগ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে দখল হওয়া খালগুলো উদ্ধারে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে। খালের দুই পাশের বাসা-বাড়িসহ নানা ধরনের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে দখলকারীরা অসন্তুষ্ট হলেও খুশি সচেতন নাগরিকরা। বৃষ্টির পানি খাল দিয়ে এখন অনায়াসেই চলে যেতে পারছে। ফলে অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার ভোগান্তি নিরসন হয়েছে।
সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘মসিকের সড়ক যোগাযোগ ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নতকরণ’ এই প্রকল্পে বরাদ্দের ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকার মধ্যে ৭২৯ কোটি টাকার কাজ চলছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ শেষ হলে এখানেও জলাবদ্ধতা থাকবে না।
এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ক্রাশ প্রোগ্রাম চলমান রয়েছে। মশার লার্ভা ধ্বংসে লার্ভিসাইড এবং উড়ন্ত মশা ধ্বংসে এডাল্টিসাইড প্রয়োগ করা হচ্ছে। মসিকের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শুক্রবার বাদে অন্য দিন বাসা থেকে ময়লা না নিলে যথাযথব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্পের আওতায় নগরীতে চালু করা হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।
স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ের যানজট নিরসনে এবং শম্ভুগঞ্জ সেতুতে যান চলাচলের চাপ কমাতে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবারের আদলে দৃষ্টিনন্দন স্টিল আর্চ ব্রিজ নির্মাণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন কালাম ভোরের আকাশকে বলেন, নগরীর প্রায় প্রত্যেকটি সড়কে এলইডি বাতি স্থাপন করা হয়েছে। রাতের ঝলমলে আলোতে নগরবাসী রাতের বেলাতেও এখন নিশ্চিন্তে চলাচল করতে পারছেন। তবে নগরীর সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট ও জলাবদ্ধতা।
মসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী বলেন, ভোগান্তিবিহীন ও সুন্দর নগরী গড়তে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসন করতে খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং খাল সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাশার মুহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন বলেন, স্টিল আর্চ সেতু নির্মাণ হলে ময়মনসিংহের সঙ্গে শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, চট্টগ্রাম ছাড়াও জেলার ৭টি উপজেলার যোগাযোগ বাড়বে। এ ছাড়া রাজধানীর সঙ্গে নাকুগাঁও ও হালুয়াঘাট স্থলবন্দরের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, বাড়ি করার আগে ড্রেনের জন্য জায়গা ছাড়তে হবে। অনেকে পাইলিংয়ের মাটি সরাসরি ড্রেনে ফেলে ড্রেনকে অকার্যকর করে দেয়। অনেকে আবার ময়লা-আবর্জনা, বোতল, বস্তাসহ কঠিন আবর্জনা ড্রেনে ফেলে দেয়। এই অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করতে হবে, তা না হলে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য