খুলনার পাইকগাছায় নার্সারিগুলোতে গুটিকলম তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে মালিক ও শ্রমিকরা। বর্ষাকাল গুটিকলম তৈরি করার উপযুক্ত সময়। সাধারণত বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস গুটিকলম তৈরির উপযুক্ত সময়। মাতৃগুণ বজায় রাখা, দ্রুত ফলন, রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা বাড়ানো এবং অধিক ফলন পেতে গুটিকলম ব্যবহার করা হয়। সম্পূর্ণ মাতৃগাছে গুণাগুণ সমৃদ্ধ চারা করার জন্য গুটিকলম জনপ্রিয়। কাগজি লেবু, পেয়ারা, লিচু, জলপাই, ডালিম, করম চা, গোলাপ জামসহ বিভিন্ন গাছে গুটিকলম করা হয়।
উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ছোট-বড় প্রায় ৫ শতাধিক নার্সারি গড়ে উঠেছে। যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যা রয়েছে গদাইপুর গ্রামে। নার্সারিতে প্রায় ৫ লাখ গুটিকলম তৈরি করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম শুরুতে চারা তৈরির জন্য নার্সারি মালিক ও কর্মচারীরা গুটিকলম তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। যে গাছের ডালে গুটি করা হবে সে ডালের বয়স কমপক্ষে ৬ মাস থেকে ২ বছর হতে হবে।
গুটিকলম তৈরি করতে গাছের ডালের দুই ইঞ্চি মতো ছাল পুরাটা গোল করে কেঁটে ফেলে জৈব সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে কাঁটা অংশ ভালো করে বেঁধে গুটি করতে হবে। মাটির গুটি সবসময় ভিজা রাখতে হবে। মাটিতে পলিথিন দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। ১ মাসের মধ্যেই মাটির ভেতর থেকে শিকড় বেড় হয়।
হিতামপুর গ্রামে অবস্থিত রজনীগন্ধা নার্সারির মালিক সুকনাথ পাল জানান, এ বছর তার নার্সারিতে ২৫ হাজার গুটিকলমের চারা তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে মিস্টি জলপাই ১০ হাজার, মাল্টা ১০ হাজার, পেয়ারা ৩ হাজার ও লিচু ২ হাজার চারার গুটিকলম করা হচ্ছে। গুটিকলম তৈরিতে অভিজ্ঞ নার্সারি কারিগরের দরকার হয়।
গদাইপুর গ্রামের গুটি কলমের অভিজ্ঞ কারিগর হামিদ মোড়ল জানান, প্রতিটি গুটি দুই টাকা দরে তৈরি করছি। গোপালপুর গ্রামের গুটিকলমের অভিজ্ঞ কারিগর মোক্তার ও সালাম বলেন, লেবু গুটি ২ টাকা ও অন্য জাতের গুটিকলম ১ টাকা ৭০ পয়সা দরে তৈরি করছি। তা ছাড়া দৈনিক মজুরি হিসাবে নার্সারিতে কাজ করে থাকে।
গদাইপুর গ্রামে অবস্থিত সততা নার্সারির মালিক অঞ্জনা রানী পাল জানান, তার নার্সারিতে বিভিন্ন জাতের প্রায় ৩০ হাজার গুটিকলম তৈরি করছেন। শ্রমিকের অভাবে কলম তৈরি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে কলম তৈরির সময় পার হয়ে গেলে এ মৌসুমের আর গুটিকলম তৈরি করা যাবে না। সে কারণে কলম তৈরিতে অধিক পয়সা খরচ হচ্ছে।
পাইকগাছা উপজেলা নার্সারি মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার পাল জানান, কলম তৈরির শ্রমিক ঠিকমতো না পাওয়ায় উচ্চমূল্যে শ্রমিক নিয়ে কলম তৈরি করতে হচ্ছে। গদাইপুর এলাকার তৈরি কলম চারা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে।
বিগত বছরের তুলনায় চারার বাজার ভালো। গদাইপুর নার্সারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল সরদার জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় ২শ কোটি টাকার চারা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। তার কাছে সব ধরনের চারাগাছ রয়েছে। তার উৎপাদিত চারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া শামসুল, আক্তার, রওসনারা, মিজানুর, নাসির, নজরুল, বেল্লালসহ নার্সারি মালিক তাদের উৎপাদিত চারা বিক্রি লাভবান হবেন বলে ধারণা করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, দেশের খাদ্য উৎপাদনে নার্সারির ভ‚মিকা অপরিসীম। পাইকগাছার নার্সারি শিল্প খুলনা জেলায় শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। এ এলাকার চারার মান ভালো। নার্সারি ব্যবসায়ীরা চারা বিক্রি করার জন্য আশানারূপ বাজার ধরতে পারায় তারা লাভবান হচ্ছে। নার্সারিতে উৎপাদিত চারা সবুজ বনায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে তেমনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য