গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণের ফলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পশ্চিম সরফভাটা ও বেতাগী ইউনিয়নে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। সারা বছর ধরে নদী থেকে বেপরোয়া বালি উত্তোলনের ফলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। চলমান বর্ষায় ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে আরো শত শত ঘরবাড়ি ফসলি জমি ও রাস্তাঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্লক স্থাপণের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
সরেজমিনে উপজেলার বেতাগী ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়নের তিন পাশেই কর্ণফুলী নদী রয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ইউনিয়নটির বিভিন্ন স্পটে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। বেতাগী ইউনিয়নের কাউখালী, কাঙ্গালি শাহ মাজার সংলগ্ন এলাকা, হাজি ইদ্রিছ মিয়ার ঘাট, মাতব্বর বাড়ি, চিরিয়া, মৌলভী সাহেবের ঘাট, চান্দরবাড়ি, বড়ুয়াপাড়া, কুলালপাড়া, গোলাম বেপারী হাট, বশর মাস্টার বাড়ি এলাকাসহ বিভিন্ন স্পটে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এসব স্থান পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানী। এসময় ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাবুল কান্তি চাকমাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।অন্যদিকে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে সরফভাটা ইউনিয়নের পশ্চিম সরফভাটা মৌলানা গ্রাম থেকে পুরাতন সিকদার হাট পর্যন্ত ৫০০ মিটারেরও অধিক এলাকা। এ বর্ষাতেই এসব এলাকার বেশ কিছু ঘরবাড়ি-ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অন্য কোথাও যাওয়ার ওপায় না পেয়ে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড়ের বসতঘরেই থাকছেন।
বেতাগী ইউনিয়নের কাউখালি গ্রামের বাসিন্দা নবীর হোসেন বলেন, বেশ কয়েকবছর ধরেই ভাঙনে ফসলি জমি হারিয়েছি। গেল বর্ষায় বসতঘরও ভাঙনের কবলে পড়েছে। এতে বসতভিটার সামনের কয়েকটি কক্ষ ভেঙে যায়। অন্যত্র যাওয়ার জায়গা না থাকায় পিছনের কক্ষগুলোতেই আমরা থাকছি। এ বর্ষায় তাও ভেঙে যাচ্ছে।
মেহেরাজ খাতুন নামে এক নারী বলেন, স্বামী-সন্তান কেউ নেই তার। স্বামী মারা যাওয়ার পর কাউখালী এলাকায় বাপের বাড়িতে ঘর বেধে বসবাস করে আসছেন। এখন নদী ভাঙনে তাও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই বলে তিনি জানান।
ওমর ফারুক নামে এক যুবক অভিযোগ করে বলেন, আগে ভাঙনের তীব্রতা এত বেশি ছিল না। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি নদী থেকে বেপরোয়া বালি উত্তোলনের ফলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।বেতাগী ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলম বলেন, ভৌগোলিক কারণে বেতাগী ইউনিয়নের তিন দিকেই কর্ণফুলী নদী। বর্ষা এলেই নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙন দেখা দেয়। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধক ব্লক স্থাপন হয়েছে। তবে চলমান বর্ষণের ফলে অন্তত ২০০ একর কৃষি জমি, জনগুরুত্বপূর্ণ আমান উল্লাহ সড়কসহ শত শত মানুষের ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি বলেন, বেতাগী ইউনিয়নের অন্তত ১৫০০ মিটার অংশ ভাঙনের মুখে রয়েছে।
নদী ভাঙন পরিদর্শনকালে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গণি ওসমানী বলেন, টানা বর্ষণে বেতাগীতে কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমি সরেজমিনে গিয়ে দুর্গত মানুষদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। তাদের পাশ্ববর্তী স্কুল-কলেজ, মাদরাসায় গরু-ছাগলসহ আশ্রয় নিতে বলেছি। ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা বেতাগীসহ রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ব্লক স্থাপনের জন্য একটি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন আছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে সমস্যা নিরসন হবে।
মন্তব্য