-->

সৌদির খেজুর চাষে সফল জাকির

দিনাজপুর প্রতিনিধি
সৌদির খেজুর চাষে সফল জাকির
নিজ খেজুর বাগানে জাকির হোসেন

ধান-লিচুর জেলা হিসেবে সুখ্যাতি আছে উত্তরের জেলা দিনাজপুরের। এই জেলার কাটারিভোগ চালের সুনাম বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। আবার রসালো লিচু ও মুগডালের পাঁপড়ও বেশ বিখ্যাত। এখন এই ধান-লিচুর দেশে চাষ হচ্ছে সৌদি আরবের বিখ্যাত সব খেজুর।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী সৈয়দপুর মহাসড়কের পাশে পরিত্যক্ত ২০ শতক জমিতে সারিবদ্ধভাবে লাগানো রয়েছে ১৯টি খেজুর গাছ। সারি সারি সব গাছে সবুজ পাতার ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে হলুদ, লাল ও সবুজ রঙের খেজুর। এলাকায় মরুর এই ফল চাষের অসাধ্যকে সাধন করে স্থানীয়দের তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ফুলবাড়ী উপজেলার স্বজনপুকুর গ্রামের প্রবাসফেরত জাকির হোসেন। এখন তার বাগানের গাছে ফল এসেছে। পাশাপাশি তৈরি করছেন নতুন চারা। আগামীতে বাগানের পরিধি বৃদ্ধি এবং খেজুর ও চারা বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করবেন বলে আশা করছেন।

 

খেজুর বাগান দেখতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, ‘আমরা তো সৌদির খেজুর খাই। সৌদির খেজুর দেখছি, বাংলাদেশে এমন খেজুর হয় তা দেখি নাই। আজ প্রথম দেখলাম, আমাদের দেশেও সৌদির খেজুর আবাদ হচ্ছে। আবার খাইতে পারছি এটাই আমাদের গর্ব।’

 

বাগান পরিচর্যাকারী জামিল হোসেন বলেন, আমি বাগানের প্রথম চারা রোপণ শুরু করার পর থেকে এ বাগানে কাজ করছি। দীর্ঘদিন বাগান পরিচর্যা করার পরে গত বছর থেকে ফল আসা শুরু হয়েছে। এখন মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে বাগান দেখতে আসছে, ফল খাচ্ছে, আবার কেউ খেজুর গাছের চারা নিয়ে যাচ্ছে।

 

জাকির হোসেন বলেন, ১৯৯৯ সালে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে কুয়েতে যাই। সেখানে প্রথমে একটি মোটর মেকানিকের দোকানের কাজ শুরু করি। দীর্ঘ ২০ বছর কুয়েতের সুয়েব শহরে ছিলাম। সেখানে থাকা অবস্থায় দেখেছি বড় বড় খেজুরের বাগান। আবার প্রতিটি অফিসের ও বাড়ির সামনে ছোট ছোট খেজুর গাছ। তখন চিন্তা করি এদের দেশে হলে আমাদের দেশে কেন হবে না। সেই চিন্তা থেকে ২০১৭ সালে দেশে আসার সময় ১২ কেজি গাছ পাকা খেজুর কিনে এনে দেশে চারা করার চেষ্টা করি।

 

চারা তৈরিতে সফল হলে পরিত্যক্ত ২০ শতক জমিতে সারিবদ্ধভাবে ১৯টি গাছ রোপণ করার পরে পরিচর্যা শুরু করি। দীর্ঘ চার বছর গাছগুলোকে ভালোভাবে পরিচর্যা করার পরে তিনটি গাছে ফল আসে। আবার কিছু কিছু গাছে ৫ বছর পর ফল আসে। একেকটি গাছে ফল আসে আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ কেজি করে। দ্বিতীয়বার ৯টি গাছে ফল এসেছে। এবারের ফলন গত বছরের তুলানায় দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। গত বছর যে গাছে ফল এসেছিল ২০ থেকে ২৫ কেজি সে গাছে এবার ফল এসছে ৭০ থেকে ৮০ কেজি। আবার কোনো গাছে ফল ১০০ কেজির বেশি ধরেছে।

 

আমার বাগানে ছয় জাতের খেজুরের চাষ হচ্ছে। যেমন মরিয়ম, আজওয়া, খলিজি, মেডজুল, বাহির ও আম্বার। আমি এ বছর ফল বিক্রি করছি না। প্রথম দিকে ফল বিক্রি করার চিন্তা ছিল কিন্তু দর্শনার্থীদের চাপে আর এ বছর ফল বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। যারাই আসতেছে তাদের প্রত্যেকের হাতে দুটি-চারটি করে খেজুর দিচ্ছি খাবার জন্য।

 

এভাবে দিতে দিতে প্রায় ৫ থেকে ৬ মণ ফল বিলিয়ে দিয়েছি দর্শনার্থীদের। এখন আর অল্প পরিমাণ আছে। আমি নিজেও কখনো ভাবিনি যে, দিনাজপুরের মাটিতে এত সুন্দর ফলন আসবে। এখন আমার এখানে দিনে শত শত দর্শনার্থী এখানে এসে খেজুর গাছের চারা কিনছে। আমি তাদের কাছে এক একটি চারা এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করছি এবং পরামর্শ দিচ্ছি কীভাবে পরিচর্যা করবে।

 

তিনি আরো বলেন, এ বছর আমি ২ একর জমি প্রস্তুত করেছি। সেই জমিতে আরো ৩০০ খেজুর চারা রোপণ করে বাগানের পরিধি বৃদ্ধি করব। বাগান বৃদ্ধি ও চারা বিক্রি জন্য আজোয়া ও মরিয়ম জাতের খেজুরের বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করেছি।

 

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, উপজেলায় এই প্রথম একজন কৃষক সৌদির খেজুর চাষ করছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে বাগানের খোঁজ রাখা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version