-->
শিরোনাম

কিশোর গ্যাং: জড়িত হত্যা, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ে

মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর
কিশোর গ্যাং: জড়িত হত্যা, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ে

মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর: শরীয়তপুরে বিভিন্ন এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। হত্যা, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ে জড়িত হয়ে পড়ছে তারা। মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে সদর উপজেলাধীন ডোমসারে এক শিশু শিক্ষার্থীকে অপহরণের পর ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবিতে হত্যা এবং একই উপজেলার শৌলপাড়ায় এক মাদ্রাসার ছাত্রীকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় আলোচনায় উঠে এসেছে কিশোর গ্যাং। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে অভিভাবক মহল।

 

জানা গেছে, ১২ আগস্ট শৌলপাড়া ইউনিয়নের মোল্লাবাড়ির কান্দি গ্রামের রাস্তার ওপর থেকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় ফারজানা নামে এক মাদ্রাসাপড়ুয়া ছাত্রীকে অপহরণ করে মোবাইল ফোনে তার বোন শারমিন আক্তারের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। এ ঘটনায় অপহৃতার ভাই ফয়সাল আকন পালং মডেল থানায় অভিযোগ করলে ৩ কিশোরকে আটক করে পুলিশ এবং উদ্ধার করা হয় শিক্ষার্থীকে।

 

এ ছাড়া ১ আগস্ট একই উপজেলার ডোমসারে খিলগাঁও গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মনির হোসেন খানের ছেলে স্থানীয় শিশুকানন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হৃদয় খান নিবিড়কে অপহরণ করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই শিশু শিক্ষার্থীর পিতামাতা সন্ত্রাসীদের চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে না পারায় শিশুটিকে নির্মমভাবে হত্যা করে একটি ইটভাটার পাশে মাটিচাপা দিয়ে রাখে দুর্বৃত্তরা।

 

একের পর এক অপহরণ, হত্যার ঘটনায় শঙ্কিত অভিভাবক মহল। এদিকে জেলা শহরসহ উপজেলা সদরের অলিগলিতে কিশোর গ্যাং সদস্যরা দাপট চালিয়ে যাচ্ছে ফ্রি-স্টাইলে। কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য শরীয়তপুরের জন্য এখন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। পথেঘাটে, চায়ের দোকান ছাড়িয়ে এখন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পৌঁছে গেছে তাদের গ্রুপভিত্তিক কার্যক্রম।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কিশোর অপরাধ চক্রের বেশিরভাগ সদস্যই মাদকাসক্ত। গাঁজা থেকে শুরু করে ফেনসিডিল ও ইয়াবা সেবনে অভ্যস্ত তারা। মাদকের টাকা জোগাতে তারা জড়িয়ে পড়ছে চুরি বা ছিনতাইয়ে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার পথে, গেটে এমনকি কোচিং বা প্রাইভেট সেন্টারগুলোর সামনে প্রকাশ্যেই তারা মেয়েদের ইভটিজিং করছে। বড় কোনো ঝামেলায় পড়লে ‘বড় ভাইয়েরাই’ তাদের উদ্ধার করেন। শরীয়তপুর জেলা শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে, কালেক্টর স্কুল, সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজ, ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদরে ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, সাজনপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় গেইটে, রামভদ্রপুর রেবতী মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের সড়কসহ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসে মেয়েদের নিয়মিত উত্ত্যক্ত করছে তারা। মেয়েদের প্রতি দূর থেকে অশালীন কথা ও অঙ্গভঙ্গি করছে উঠতি বয়সের কিশোর গ্যাং সদস্যরা। সুযোগ বুঝে নারীর গায়ে হাত দেয়া, চুল বা ওড়না ধরে টান দেয়ার ঘটনাও ঘটাচ্ছে তারা। কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে হেঁটে চলাচল করতে পারেন না মেয়ে শিক্ষার্থীরা। মোডিফাইড বাইক (বিকট শব্দ হয় এমন মোটরসাইকেল) নিয়ে মহড়া দেয় কিশোর গ্যাং সদস্যরা।

 

অধিকাংশ সদস্যরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও গ্যাং সদস্যরা ঘটাচ্ছে নানা অঘটন। খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করছে না। কিশোরদের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছরের বেশি নয়। অথচ তাদের কথাবার্তা পুরোই সন্ত্রাসীদের মতো। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান-বাজনা, খেলার মাঠ, ড্যান্স ও ডিজে পার্টি, বিভিন্ন ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে চায় এসব কিশোর গ্যাং।

 

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক, সদর উপজেলার সমিতির হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন-অর-রশীদ বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসাই বন্ধ করে দিয়েছে। মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেক অভিভাবক ঘটনা কাউকে না জানিয়ে চুপচাপ থাকেন। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতা দেখেন না তারা। এটি উদ্বেগজনক। তবে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্রিয় রয়েছেন তারা।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version