-->

১৫ গ্রামের মানুষের ভরসা নৌকা, আবার সাতজনের বেশি নয়

সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
১৫ গ্রামের মানুষের ভরসা নৌকা,
আবার সাতজনের বেশি নয়
ক্যাপশান-তিন ইউনিয়নে এই নৌকা ছাড়া যাতায়াতের আর কোনো উপায় নেই

নদীর নাম ঘাঘট নদী, নদীর পূর্ব পাশে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের দামোদরপুর ইউনিয়ন। পশ্চিম পাশে জামালপুর ও রসুলপুর ইউনিয়ন। এই তিন ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের বাসিন্দাদের নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা ছোট একটি নৌকা। দীর্ঘদিন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন গ্রামবাসী।

 

স্থানীয়রা জানান, উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে জামালপুর ইউনিয়নের চকশলাইপুর এবং দামোদরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাঙ্গামোড় গ্রাম। এই দুই গ্রামের বুক চিরে মাঝখানে প্রবাহিত হয়েছে ঘাঘট নদী। আর উপজেলার মাদার ঘাটের সম্বল একটি মাত্র ছোট্ট নৌকা। তাও আবার সাতজনের বেশি যাত্রী ওঠা যায় না।

 

জামালপুর ইউনিয়নের চকশলাইপুর, চকদাড়িয়া, শ্রীকলা, গোপালপুর ও পাতিল্যারকুড়া গ্রাম। রসুলপুর ইউনিয়নের মহিষবান্দি ও বৈষ্ণবদাস। দামোদরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাঙ্গামোড়, মধ্য ভাঙ্গামোড়, খুনিয়াপাড়া, মরুয়াদহ, কিশামত দশলিয়া, দামোদরপুর, নিয়ামতনগর ও লালবাজার গ্রাম। এই ১৫ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষদের এ কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, চকশলাইপুর, চকদাড়িয়া ও শ্রীকলা গ্রামের সাত শিক্ষার্থী ছোট নৌকাটি দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন। তারা সবাই ভাঙ্গামোড় দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

 

ভাঙ্গামোড় দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী চকদাড়িয়া গ্রামের জেসমিন আক্তার বলেন, তাদের গ্রামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। তাই লেখাপড়ার জন্য নদী পার হয়ে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হয়।একই বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মহিষবান্দি গ্রামের মো. ছাব্বির ইসলাম বলেন, নদীর পূর্ব পাড়ে নিয়ামত নগর ফাজিল মাদরাসা, নিয়ামত নগর হাইস্কুল, ভাঙ্গামোড় দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, কান্তানগর উচ্চ বিদ্যালয়সহ সাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী নদীর পশ্চিম পারের গ্রাম থেকে প্রতিদিন এই নদী পার হয়ে আসতে হয়।

 

একই বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী শ্রীকলা গ্রামের সোনিয়া খাতুন জানায়, এই ঘাটে একটিমাত্র নৌকা। সেটি অনেক ছোট। পাঁচ-ছয়জনের বেশি উঠলে দোল খায়। তারপরও বেশি যাত্রী নিয়ে লোক পারাপার করা হচ্ছে। তারা ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে।

 

একই গ্রামের কলেজ ছাত্র শফিউল আলম বলেন, পানি বৃদ্ধি ও কমার সময় নদীতে স্রোত থাকে। তখন পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সেতুর কোনো বিকল্প নেই।চকদাড়িয়া গ্রামের ব্যবসায়ী মহির উদ্দিন বলেন, এখানে সেতু না থাকায় চার কিলোমিটার ঘুরে মহিষবান্দি বাজার হয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা শহর থেকে মালামাল আনতে হচ্ছে। ফলে পরিবহন খরচ বেশি পড়ছে।চকশলাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিরিনা পারভীন বলেন, ইউনিয়ন দুটির সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হয়। অনেক অভিভাবক শিশু শিক্ষার্থীকে নদী পারাপার করে দিয়ে যান।

 

ভাঙ্গামোড় দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম নান্নু মিয়া জানান, শুধু শিক্ষার্থী ও তিন ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের লোকজনই নন। সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ও গাইবান্ধা সদরের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মাদারগঞ্জ হাটে এই খেয়াঘাট পারাপার হয়ে যাতায়াত করে। এতে করে তাদের ৮-৯ কিলোমিটার পথ কম পাড়ি দিতে হয়। জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাওছার হাসান মণ্ডল ও দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদ মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই ঘাঘট নদীর ওপর সেতু নির্মাণে জন্য উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় একাধিকবার বলা হয়েছে। এলজিইডিকে জানানো হয়েছে।

 

সাদুল্লাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাহারিয়া খান বিপ্লব বলেন, এখানে সেতু নির্মাণ করা জরুরি। এ জন্য এলজিইডিকে তাগাদা দেয়া হচ্ছে।

 

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) গাইবান্ধা কার্যালেয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম বলেন, এই ঘাঘট নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রকল্প তৈরি করতে বলা হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version