আমাজন নামে প্রতারণার পরপরই এবার এমএলএম প্রতারণার শিকার হয়ে বাংলাদেশ থেকে চলে গেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। আবারো সর্বস্বাস্ত হলো দেশের লক্ষাধিক যুবক। বরিশাল থেকেও এ প্রতারণায় জড়িয়ে ১০ কোটির বেশি টাকা চলে গেছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। আর সবকিছু জেনে বুঝেও নীরব বরিশালের পুলিশ এবং বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
কয়েকদিন ধরে আপডেট আপডেট খেলার পর গত ১৮ আগস্ট শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে অবৈধ অনলাইন গ্যাম্বলিং ক্রিপ্টো ট্রেডিং করা এমএলএম কোম্পানি এমটিএফই। ধারণা করা হচ্ছে, এ কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এর আগে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিদেশি কয়েকটি অ্যাপসহ আমাজন নামের ফাঁদে অনলাইনে বিনিয়োগ করে সর্বস্বাস্ত হয়েছে হাজারো মানুষ। এর একটি চক্রের সন্ধান পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে চারজনকে আটকও করা হয়েছিল। সে সময় ডিবি বলেছে, তিন মাসে চীনে অন্তত ১০০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে এবং চীনের দুই নাগরিকসহ চারজন গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকার বিষয়ে কিছুই বলেননি তারা। অনলাইন গ্যাম্বলিং ক্রিপ্টো ট্রেডিং করা এমএলএম কোম্পানি এমটিএফই দুবাইভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান বলে জানা গেছে। অনেকটাই ডেসটিনির আদলে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম পঞ্জি মডেলে ব্যবসা করতো। ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিনিয়োগকারী ছিল। যার মধ্যে শুধু বরিশাল থেকেই যুক্ত ছিল হাজারের বেশি মানুষ।
বরিশাল কাশিপুরের ভুক্তভোগী এনায়েত মোল্লা বলেন, বরিশাল থেকে কম হলেও হাজার দেড়েক মানুষ অনলাইন গ্যাম্বলিং ক্রিপ্টো ট্রেডিং করা এমএলএম কোম্পানি এমটিএফইতে যুক্ত হয়েছে। কম হলেও ১০-১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বরিশাল থেকে। বরিশালের বানারীপাড়ার বাসিন্দা ভুক্তভোগী সালেহ আকরাম জানান, তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এবং সিইও হবার ক্যাটাগরিতে পৌঁছে ছিলেন। তার নীচে ১০০ জনের বেশি যুক্ত হয়েছেন। তার ইনভেস্ট ছয় লাখ টাকা। টাকা উত্তোলন সময়ে সার্ভার আপডেট শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে কেউই কোনো টাকা উত্তোলন করতে পারে না। এমন অবস্থায় তিনি তার সার্কেলের সবাইকে ইনভেস্ট করতে নিষেধও করেছেন। শুক্রবার রাতে হঠাৎ দেখেন সার্ভার উধাও। কেউই আর তাদের একাউন্টে বা প্রোফাইলে ঢুকতে পারছেন না। বাংলাদেশে ৪০০ এর বেশি সিইও রয়েছে এবং আরও ১০০০ জন সিইও হবার তালিকায় ছিলেন দাবী করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশালের একজন সিইও বলেন, ৯৩০ ডলার বা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে মাসে ৪৫ হাজার টাকা লাভ দিতো কোম্পানি। ৫০০ ডলার বা ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে ২২ হাজার টাকা লাভ দিতো। এছাড়া কেউ যদি ৩ হাজার ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করে এবং ১৫ জন ব্যক্তিকে কোম্পানিতে যুক্ত করে আর এই ১৫ জন মিলে যদি ৯ হাজার ডলার বিনিয়োগ করে তাহলে ৩ হাজার ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করা ব্যক্তি প্রতি মাসে অন্তত ৪ লাখ টাকা করে লাভ পেয়ে থাকে। এভাবেই শত শত যুবককে কোটিপতি বানিয়েছে এই কোম্পানি। তবে হঠাৎ করে কোম্পানিটি উধাও হয়ে যাবে তা বিশ্বাস করতে পারছি না।
বরিশালের ব্রাউনকম্পাউন্ড সড়কের বাসীন্দা স্বপন বলেন, আমাদের ৩ জনের ছয় লাখ টাকা করে হারিয়েছি। ফেসবুকের নিউজ ফিডে বিভিন্ন বিদেশি অ্যাপের লোভনীয় মুনাফার বিজ্ঞাপন প্রচারের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অনলাইন প্রচারণায় আকৃষ্ট হয়ে এতে অংশ নিয়েছিলাম। যদিও গত ১৫ দিন যাবত টেকনিক্যাল সমস্যা বলে এই কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কমিশন বন্ধ রেখেছিল। এখানে যারা টাকা দিচ্ছিলেন তারা আর টাকা উঠাতে পারছিলেন না। বৃহস্পতিবার থেকে আর কোনও লেনদেন হচ্ছে না। শুক্রবার পুরোপুরিভাবে এমটিএফই তাদের সিস্টেম বন্ধ করে দিয়েছে । কমপক্ষে ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করলে দিন শেষে পাঁচ হাজার টাকা লাভ আসবে। এই কল্পিত মুনাফার লোভে শত শত মানুষ বিনিয়োগ করেছিলেন। অনেকে গহনা এবং মূল্যবান সামগ্রী বন্ধক রেখেও বিনিয়োগ করেছিলেন। বরিশালের বাবুগঞ্জ থেকে এক মাস আগে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা যুবক শামীম বলেন, প্রতিবেশী বন্ধুর কথায় বিশ্বাস করে আমি এই অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করি। আমি প্রতিদিন মুনাফা দেখছিলাম, কিন্তু এখন পর্যন্ত এক টাকাও তুলতে পারিনি। এর আগেই কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। পুলিশের ট্রান্সন্যাশনাল অ্যান্ড সাইবার ক্রাইম বিভাগ এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন বরিশালের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার ফজলুল করিম বলেন, আমরা বরিশালের বিষয়গুলোও ঢাকা হেডকোয়ার্টারে নোটিশ করেছি। ঢাকায় এরমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে জরুরী মিটিং হয়েছে ।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য