কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিনিয়ত আশ্রয়শিবিরগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দেড় মাসে বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরের ৪ হাজার ৮৭৩ জন রোহিঙ্গা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যে উখিয়ার ৬টি আশ্রয়শিবির ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
আশ্রয়শিবিরে খাল-ছড়া ও শতাধিক নালা-নর্দমায় ময়লা-আবর্জনা থাকা, ত্রিপলের ছাউনির ঝুপড়িতে বসবাস, অসচেতনতাসহ নানা কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ভাষ্য, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আশ্রয়শিবিরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
কুতুপালং রেজিস্টার্ড আশ্রয়শিবিরের চিকিৎসক মো. মুমিনুল হক বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যেসব রোহিঙ্গা হাসপাতালে আসছেন, তাদের ঘরবাড়িসহ চারপাশ পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আশ্রয়শিবিরের ভেতরের নালা-নর্দমা-জলাশয়ের জমে থাকা পানি ও আবর্জনা পরিষ্কার এবং মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সাড়ে ৭ মাসে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে ৬ হাজার ৪১১ জন রোহিঙ্গা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ে মারা গেছেন ৭ জন। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৩৮ জন। বাকি দেড় মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৭৭৩ জন। এর মধ্যে জুলাই মাসে ৩ হাজার ২ জন এবং আগস্টের ১ম ২০ দিনে ১ হাজার ২৭৮ জন রোহিঙ্গা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। রোববার পর্যন্ত টেকনাফে ১৬৫ জন এবং উখিয়ায় ১৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে উখিয়ার ছয়টি আশ্রয়শিবির। সেগুলো হলোÑ কুতুপালং, মধুরছড়া, বালুখালী, লম্বাশিয়া, ময়নারঘোণা এবং বালুখালী আশ্রয়শিবির। এর মধ্যে কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
আশ্রয়শিবিরগুলো ডেঙ্গুর হটস্পট হওয়ার নেপথ্যে কয়েকটি বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। আশ্রয়শিবিরের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট সাত-আটটি খাল-ছড়া ও শতাধিক নালা-নর্দমা প্লাস্টিক বর্জ্যসহ ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি, পানিদূষণ ও নিয়মিত খাল-ছড়া পরিষ্কার না করা, আশ্রয়শিবিরে শতভাগ প্লাস্টিকের ব্যবহার এবং পয়োবর্জ্য অপসারণে অপরিকল্পিত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, বাঁশ ও ত্রিপলের ছাউনিযুক্ত ঝুপড়িতে ঘনবসতি, মশা-মাছির উৎপাত ও মশারি ব্যবহারে রোহিঙ্গাদের অনীহা অন্যতম কারণ। আশ্রয়শিবির ঘুরে শতাধিক রোহিঙ্গা নেতা, সেবা সংস্থার কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা নজির আহমদ বলেন, করোনা মহামারির সময় প্রায় ২ বছর গৃহবন্দি জীবন কাটিয়েছেন রোহিঙ্গারা। এখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। অসচেতনতার কারণে বহু রোহিঙ্গা সঠিক সময়ে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যায় না। যেসব পরিবারে মশারি সরবরাহ করা হয়েছে, অধিকাংশরাই ব্যবহার করছেন না। এতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় আশ্রয়শিবিরে এ পর্যন্ত ৪ লাখ মশারি বিতরণ করার পাশাপাশি প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণসহ আশ্রয়শিবিরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও প্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন বিপাশ খীসা।
তিনি বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরের পাশের গ্রামগুলোতে লক্ষাধিক মশারি বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য