ভরা মৌসুমেও বাগেরহাটের জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্খিত ইলিশ। এমন অবস্থায় খরচের টাকা তুলতে বিপাকে পড়েছেন জেলে-মহাজনরা। ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলে-মহাজনদের অনেকেই চিন্তা করছেন পেশা পরিবর্তনের। খরচের টাকা তুলতে না পেরে দাদনের টাকা পরিশোধে তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
বাগেরহাটের জেলেরা বলছেন, এক ধরনের মেশিনের সহায়তায় সাগরে ইলিশ ধরছেন ভারতের ও চট্টগ্রামের জেলেরা। ওই মেশিন দিয়ে কোথায় ইলিশ মাছ রয়েছে তা শনাক্ত করা যায়। ওরা সব মাছ ধরে নিয়ে যান। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, ‘এখনই সময় এসেছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের। আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইলিশ ধরার জন্য জেলেদের বিভিন্ন সভা-সেমিনারের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছি।’
সরেজমিনে বাগেরহাট কেবি বাজার মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশের অভাবে অনেকটা শূন্য অবস্থায় রয়েছে কেবি বাজারের আড়তগুলো। দেখা যাচ্ছে না আগের মতো ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক। এ বাজারে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে চাহিদার তুলনায় তা খুবই কম।
কেবি বাজারের আড়তগুলোতে কেজিপ্রতি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৭৫০ এবং ২৫০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত।
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামের জেলে আফজাল মোল বলেন, ‘মোগো জাইলাদের অবস্থা ভালো না। কয়েডাদিন আগে গেল ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। সে সময় ভারতের জাইল¬ারা সব মাছ ধইরা লইয়া গেছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে ঝড়-তুফান মাথায় লইয়া সাগরে গেছিলাম ইলিশ না পাইয়া খালি হাতে ফেরত আইতে হইছে। মোরা যে ট্যাহা খরচ কইরা সাগরে গেইলাম তার অর্ধেক টাকাও উডাইতে পারিনি। সামনে আবার ২১ দিনের নিষেধাজ্ঞা আসছে। মোগো এহন এই মাছ ধরার কাজ বন্ধ দেওন ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
রামপাল উপজেলার জেলে বশিরুল ইসলাম বলেন, ‘২৫ বছর ধরে মাছ ধরছি। এ বছরের মতো কম মাছ কখনো পাইনি। মাছ ধরে ভারতের জেলেরা, সঙ্গে চট্টগ্রামের বড় বড় ট্রলার। আমরা ছোটখাটো জেলেরা খালি হাতেই ফিরে আসছি সাগর থেকে। ভারতের জেলে ও চট্টগ্রামের জেলেদের ট্রলারে এক ধরনের মেশিন থাকে যা দিয়ে কোথায় ইলিশ মাছ রয়েছে তা শনাক্ত করা যায়। ওই মেশিন দিয়ে ওরা সব মাছ ধরে নিয়ে যায়।’
বাগেরহাট জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট জেলায় জেলে রয়েছেন ৩৯ হাজার ৬২৭ জন, এর মধ্যে ইলিশ আহরণে সাগরে যাওয়া নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ১৩ হাজার। তবে বেসরকারি হিসাবে সাগরে ইলিশ আহরণের জন্য প্রতি মৌসুমে সাগরে যান ৩০ হাজার জেলে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম রাসেল বলেন, বাগেরহাটের জেলেরা মূলত প্রযুক্তিগত সহায়তা না নিয়ে সাগরে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন। কারণ, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ আমাদের দেশের জেলেরা এখন ইলিশের ঝাঁক চিহ্নিত করার জন্য ‘সোনারা’ নামের এক ধনের যন্ত্রের ব্যবহার করছেন। এ কারণে তারা সাগরে ভালো মাছ পাচ্ছেন। এর বিপরীতে বাগেরহাটের জেলেরা এখনো সেই পুরোনো পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। তারা ধরনা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সাগরে মাছ ধরেন, যে কারণে সাগরে তারা কাক্সিক্ষত ইলিশ পাচ্ছেন না। এখনই সময় এসেছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের। আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইলিশ ধরার জন্য জেলেদের বিভিন্ন সভা-সেমিনারে মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছি।
বাগেরহাট কেবি বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি আবেদ আলী বলেন, গত এক সপ্তাহে কেবি বাজারে ট্রলার এসেছে ৭ থেকে ৮টি। ওই ট্রলারগুলোতে ইলিশ ছিল মাত্র ২ টনের মতো, যা খুবই সামান্য। মৌসুমের এ সময়টাতে কেবি বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টন ইলিশও উঠত। বর্তমানে পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমাদের দাদনের টাকাই উঠাতে পারছেন না জেলেরা। সব মিলিয়ে জেলে-মহাজনরা খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছেন।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য