-->

বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষে লাভবান কৃষক

মাদারীপুর প্রতিনিধি
বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষে লাভবান কৃষক
মাদারীপুর সদর উপজেলার সাদ্দামের বাগানের ড্রাগন ফল

মাদারীপুরে কৃষকদের প্রযুক্তিগত কলাকৌশল প্রদানের পাশাপাশি উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করা হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। ভালো ফলন ও বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় ড্রাগন ফল চাষে ঝুঁকছে কৃষকেরা। প্রতি বছরই ড্রাগন চাষে আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ছে।

 

পুষ্টিগুণে ভরপুর বাজারে এখানকার ড্রাগন ফল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ থেকে ৩শ টাকা দরে। বাজারে ড্রাগনের ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। কৃষকেরা এখন ড্রাগন বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাটবাজারের প্রতিটি ফলের দোকানে থরে থরে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ড্রাগন ফল।

 

জানা যায়, মাদারীপুর জেলায় ৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মাদারীপুর সদরেই এ ফলের চাষ হয়েছে বেশি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রযুক্তিগত কলাকৌশল আর সার্বিক সহায়তা পাওয়ায় ড্রাগন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা।

 

মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চরনাচনা গ্রামের সজিব হোসেন সাদ্দাম থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভুটান ও ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করে ড্রাগন ফলের চাষ দেখে বাগান করার আগ্রহ জাগে তার মধ্যে। প্রথমে দেশ ও বিদেশ থেকে উন্নত জাতের প্রায় ৫ হাজার ড্রাগন ফলের চারা সংগ্রহ করে চাষাবাদ শুরু করেন তিনি।

 

২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে সাড়ে ৩ একর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করে সফলতা আসার আগেই আকস্মিক বন্যায় তার বাগানের ড্রাগন গাছের গোড়া পচে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তাকে। ক্ষতি পুশিয়ে উঠতে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে আবার শুরু করেন ড্রাগন ফলের আবাদ। এরপর তিনি ২০২২ সাল ও চলতি বছরে জমির পরিমাণ বাড়িয়ে ৯ একরে জমিতে ড্রাগন ফলের আবাদ করেছেন।

 

ড্রাগন চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে কোটি টাকার উপরে। সাদ্দামের ড্রাগন বাগানে চারার সংখ্যা ১৮ হাজার। গাছে প্রচুর ফুল ও ফল আসতে শুরু করেছে। মাসে দুইবার ফুল আসে গাছে। একটি খুঁটিতে চারটি করে গাছ লাগানো হয়। প্রতিটি খুঁটি থেকে প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ কেজি ফল সংগ্রহ করতে পারেন কৃষকেরা। প্রতি কেজি ফল ২৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন বাগানীরা।

 

আর ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ২৭৫ টাকা থেকে ৩শ টাকায়। সাদা, লাল ও গোলাপী কালারের ভিটামিন যুক্ত ড্রাগন ফল পুষ্টিতে ভরপুর বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবং ভালো মূল্য থাকায় ড্রাগন কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। শীত যত দেরিতে আসবে ফুল ও ফল তত বেশি আসবে ড্রাগন গাছে। এ বছর বাগান থেকে ৪ বার ফল কেটেছেন সাদ্দাম। আরো ৭-৮ বার ফল কাটতে পারবেন। ১০ জন শ্রমিক এ বাগানে নিয়মিত কাজ করে।

 

সাদ্দাম হোসেন ইতোমধ্যেই তার বাগান থেকে ড্রাগন বিক্রি করে খরচ উঠিয়ে লাভের মুখ দেখেছেন। বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ড্রাগন বাগানের কোনো ক্ষতি না হলে একই গাছ থেকে কমপক্ষে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে বলে জানান সাদ্দাম হোসেন। বাগানের আগাছা নিড়ানি বা পরিচর্যা ছাড়া আর তেমন খরচ নেই।

 

সাদ্দাম হোসেনের ড্রাগন বাগান দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ মাদারীপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার লোকজন আসছে এবং ড্রাগনের চারা নিয়ে বাগান করছেন। সাদ্দাম হোসেনের ড্রাগন বাগান ছাড়াও আরো ৬ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। আগামীতে তিনি আরো বেশি জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

 

সাদ্দাম ছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষাবাদ করে লাভের আশায় বাগান শুরু করেছেন চাষিরা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version