দ্রুত অধিক মুনাফার আশায় ‘এমটিএফই’ অ্যাপের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন দেশের লক্ষাধিক বিনিয়োগকারী। বিভিন্ন এলাকার মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জেরও অনলাইনভিত্তিক এই এমএলএম কোম্পানির প্রতারণায় সর্বস্বান্ত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। হঠাৎ এমটিএফই অ্যাপে বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে ডলারে পরিণত করা টাকা উধাও হয়ে গেছে।
তবে এই অ্যাপের কল্যাণেই হঠাৎ কোটিপতি হয়েছেন ভার্চুয়াল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত মো. নুরুন্নবী ওরফে পলাশ। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালার কদমতলী গ্রামে। তবে এমটিএফই অ্যাপ উধাওয়ের ঘটনার মধ্যেই ইতোমধ্যেই নুরুন্নবী আরেক নতুন অ্যাপ জিটিসি-এক্স নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
এমনকি গত ১৭-১৯ আগস্ট জিটিসি-এক্স৩৯ কয়েকজনের বাংলাদেশ টিমের ট্যুর হয়েছে কক্সবাজারে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এমটিএফই অ্যাপ প্রতারণার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অন্যতম ম‚লহোতা নুরুন্নবী। যার স্থিরচিত্র রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে।
গোয়েন্দা সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা যায়, নুরুন্নবী ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রয়-বিক্রয়সহ মানি লন্ডারিং ও অনলাইন প্রতারণার অন্যতম হোতা। এসবের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার জন্য, নানা ধরনের ছলচাতুরী, কূটকৌশল কিংবা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকেন নুরুন্নবী। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে তিনি এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক। এই নুরুন্নবীই রাজশাহী অঞ্চলের ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনা-বেচার মাস্টারমাইন্ড। কয়েক বছর ধরে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানিতে অর্থ বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারিত করছেন।
অবৈধ অনলাইন ক্রিপ্টো ট্রেডিং কোম্পানি এমটিএফই ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। দুবাইভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটির মূলহোতা তরিকুল ইসলামের সব ডলার কেনাবেচা করেছেন নুরুন্নবী। তরিকুল ইসলাম ও নুরুন্নবী একে-অপরের সহযোগী। অভিযুক্ত নুরুন্নবী অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রা লেনদেন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি অবৈধ অনলাইন ক্রিপ্টো ট্রেডিং কোম্পানির পার্পেল ডায়মন্ড ছিলেন। তিনি নিজের ও তার পরিবারের ৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অতি অল্প সময়ে চোখধাঁধানো মুনাফার টোপে ফেলে শত শত মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন নুরুন্নবী। পিএলসি আলটিমা নামের অনলাইন ক্রিপ্টো ট্রেডিং কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলেও রূপকথার টাকার গাছ বিটকয়েনের কারবার ছাড়েননি তিনি। একইসঙ্গে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিদেশি অ্যাপের ফাঁদে অনলাইনে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেক মানুষ।
অভিযুক্ত নুরুন্নবী জানান, তিনি কৃষি খামার ও আমদানি রপ্তানি ব্যবসা করেন। একপর্যায়ে তিনি একটি অনলাইনে ক্রিপ্টো ট্রেডিং কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। নিজের ও পরিবারের মিলিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তা ছাড়া তিনি যাদের বিনিয়োগ করিয়েছিলেন তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। তবে বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবুল কালাম সাহিদ মুঠোফোনে বলেন, জেলায় প্রতারণার শিকার হয়েছেন বা এই নিষিদ্ধ অ্যাপ ব্যবহার করে অবৈধ লেনদেন করছেন বলে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। তবে এমন অভিযোগ পেলেই তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য