নেত্রকোনায় আটপাড়ার ১৫ কিলোমিটার সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কই ভাঙা। দীর্ঘদিন ধরে ওই সড়কের বেহাল দশা বিরাজ করছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে হাজারো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। খানাখন্দে পানি জমে সড়ক চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পিচ ঢালাই উঠে গেছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে লাল ইট যেন পথচারীদের বিপদ সংকেত দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সড়কটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই।
সড়কের কোথাও পিচের ঢালাই আছে, আবার কোথাও নেই। সামান্য বৃষ্টিতে ময়লা পানি ও কাদায় একাকার হয়ে যায় সড়ক। দিন দিন এসব খানাখন্দ গাড়ির চাকার চাপে ভাঙতে ভাঙতে বড় হচ্ছে। ভারি বৃষ্টি হলে দেখলে মনে হয় যেন খাল। ওই সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন নিয়ে কেউ যাতায়াত করতে চায় না। প্রায় সময়ই উল্টে যায় যানবাহন, আহত হন যাত্রীরা। পায়ে চলাও দায় ওই সড়ক দিয়ে। কাদাপানি ছিটে কাপড় নষ্ট হয়। এর মধ্যেই দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছে পথচারী ও এলাকার মানুষ।
নেত্রকোনা-আটপাড়া সড়কের নেত্রকোনা পৌরসভার ইসলামপুর মোড় থেকে স্বাবলম্বী হাসপাতাল, পূর্ব মালনী পর্যন্ত অবস্থা খুবই খারাপ। এলাকাবাসী সড়কটি সংস্কারে বারবার দাবি জানালেও কোনো কাজ হচ্ছে না। সড়কের কিছু অংশ নেত্রকোনা পৌরসভা এলাকার মধ্যে পড়লেও তা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বিভাগের অধীন। তিন বছরের অধিক সময় ধরে সড়কটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট বিভাগের।
প্রতিদিন ওই সড়ক দিয়ে শতাধিক অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে। সড়কের অবস্থা খারাপ থাকায় অনেক সময় বিকল্প পথে যানবাহনে করে মানুষকে চলাচল করতে হয়। আটপাড়া উপজেলার মানুষ ছাড়াও নেত্রকোনা সদর উপজেলার আমতলা ইউনিয়ন ও নেত্রকোনা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জেলা শহরে যাতায়াতের একমাত্র পথ এই সড়ক।
এ ছাড়া সড়কটির পাশেই রয়েছে বেসরকারি সংস্থা স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির প্রধান কার্যালয়, স্বাবলম্বী পরিচালিত হাসপাতাল, তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোনাপাড়া মাদ্রাসা, দুগিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ চলাচল করে।
ইসলামপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন ক্ষোভের সাথে বলেন, ভাঙা সড়ক দিয়ে চলাচল করা যায় না। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে হাঁটু পানি জমে যায়। আর কত কষ্ট করে আমরা চলাচল করব। শহরের মধ্যে একটি সড়ক কেন যে মেরামত করা হয় না বুঝতে পারছি না।
মালনী গ্রামের মজিবুর রহমান বলেন, সড়কটি এখন আমাদের এলাকার দুঃখে পরিণত হয়েছে। গর্ত থাকায় শহরের কোনো রিকশা বা অটো সহজে এই সড়ক দিয়ে আসতে চায় না। কোনো মালামাল আনা-নেয়া করা সম্ভব হয় না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সড়কজুড়ে অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামপুর থেকে স্বাবলম্বী হাসপাতালের সামনে পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মিটার সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। কোনো কোনো গর্ত দেখে মনে হয়, যেন ছোটখাটো জলাশয়। কিছু গর্ত দেড় থেকে দুই ফুট পর্যন্ত গভীর। ভাঙা সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলছে। বেরিয়ে পড়েছে ইটের খোয়া, সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তে পানি জমে আছে।
এলাকাবাসী জানান, সড়কটি ভাঙাচোরা হলেও আগে চলাচল করা যেত। এখন সড়কের ওপর পানি জমে থাকায় এ সড়ক দিয়ে হাঁটাও যায় না। গত বর্ষায় সৃষ্টি হওয়া খানাখন্দগুলো রূপ নিয়েছে বড় বড় গর্তে। গাড়ির চাকার চাপে ভাঙতে ভাঙতে গর্তগুলো আরো প্রশস্ত হয়েছে। সিএনজি, ইজিবাইক, রিকশা, মোটরসাইকেল, লরিসহ বিভিন্ন যানবাহন প্রায় সময়ই উল্টে যায়।
মালনী গ্রামের বাসিন্দা আফতাব উদ্দিন বলেন, অনেকদিন ধরে সড়কের এই অংশটুকু দেখছি ভাঙা এবং খুবই নাজুক। বর্ষায় গর্ত বড় হয়ে যায়। শুকনার সময়ও সড়ক দিয়ে চলাচল খুবই কষ্ট হয়। প্রায় সময়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
নেত্রকোনা পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম খান জানান, সড়কের ওই অংশ এলজিইডির। বেশ কিছুদিন ধরে সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ। সড়কটি সংস্কারের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এলজিইডির কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।
আটপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, আটপাড়া-নেত্রকোনা সড়কের বেশিরভাগ অংশই খারাপ। দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে করে মানুষকে চলাচল করতে হয়। সড়কটি সংস্কার করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
নেত্রকোনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুর রহিম শেখ জানান, ভাঙা সড়ক মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য