বসতবাড়িতে প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা মেটাতে একে একে বসানো হলো দুটি নলকূপ। কিছুদিন পর দেখা যায় নলকূপ থেকে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। পরে মেরামত করতে গিয়ে দেখা গেল ওই নলকূপের পাইপ বেয়ে উঠে আসছে গ্যাস। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার গেল আগুন ধরিয়ে দেখে। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এখন রীতিমতো সেখানে রান্নার কাজও চলছে।
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নের ঘনিচা গ্রামে একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই গ্রামের নেকবর আলীর ছেলে সাইফুল ইসলামের স্ত্রী সাবিকুন নাহার গত ছয় দিন ধরে বাড়িটির অগভীর নলকূপের পাইপ থেকে নির্গত গ্যাস দিয়েই রান্নার কাজ করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং ওই বাড়িটির লোকজন জানান, নেকবর আলীর পরিবারের লোকজন ঢাকায় থাকতেন। চার বছর আগে ঢাকা থেকে এসে নেকবর আলী এখানে জমি কিনে বাড়ি করে সপরিবারে বসবাস শুরু করেন। দুই বছর আগে বাড়ির দক্ষিণ পাশে একটি অগভীর নলকূপ বসানো হয়। দুই মাস পর ওই নলকূপ দিয়ে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে নলকূপটি অকার্যকর হয়ে যায়। চলতি বছরের প্রায় ছয়-সাত মাস আগে বাড়ির উত্তর-পূর্বদিকে আরেকটি অগভীর নলকূপ বসানো হয়। সম্প্রতি ওই নলকূপ থেকেও পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। ছয় দিন আগে মেরামতের জন্য নলকূপের ওপরের মাথা খোলা হলে শোঁ শোঁ শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। পরে বোঝা যায় পাইপ থেকে গ্যাস উঠে আসছে। এরপর থেকে ওই গ্যাসেই চলছে পরিবারটির রান্নার কাজ।
দুই বছর আগে স্থাপন করা নলকূপ থেকেও বুঁদবুঁদ আকারে গ্যাস বের হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন। এদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ায় নেকবর আলীর বাড়িতে উৎসুক জনতা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন।
নেকবর আলীর বড় ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নষ্ট টিউবওয়েলটি মেরামত করতে গিয়ে দেখি গ্যাসের মতো বের হচ্ছে। তারপর কৌতূহলবশত দিয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে গ্যাসের বিষয়টি নিশ্চিত হই। গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর সেখানে রান্না করার ব্যবস্থা করে দিই। টিউবওয়েলের ওপরের অংশে হাড়ি-পাতিল বসিয়ে আমার স্ত্রী গত কয়েকদিন ধরে রান্নাবান্না করছেন।’
তবে এভাবে রান্নাবান্না করলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তারা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলমাকান্দা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সাব অফিসার মো. শাহজাহান বলেন, ‘৩০ ফুট গভীরতার একটি বিকল টিউবওয়েলের পাইপ দিয়ে গ্যাস বের হচ্ছে। ওই গ্যাস জ্বালিয়ে ব্যবহার করা যায় আবার ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে ফেলাও যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পরিবারটির কোনোরকম ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। বিষয়টি বিস্তারিতভাবে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।’
কলমাকান্দার ইউএনও আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বিকল হয়ে যাওয়া একটি টিউবওয়েলের পাইপ দিয়ে গ্যাস নির্গত হওয়ার খবর পাওয়া গেলে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের পাঠানো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রকৃত বিষয়টি জানা যাবে। তবে কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য