মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা ও বড়লেখার আংশিক এলাকায় আবাদ হয় সিলেটের বিখ্যাত সবুজ কমলা। সম্প্রতি কমলা চাষিরা দিন দিন কমলা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। কোনো মৌসুমে অগাম বৃষ্টি হলে কিছু সংখ্যক ফল টিকে থাকে। এ ফলগুলো যখন একটু বড় ও রসালো হয় তখন এক ধরনের পোকার আক্রমণে ফসলের বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন কমলা চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন কমলা চাষে লাভ থেকে লোকসান বেশি। সে জন্য সবাই মনযোগ হারাচ্ছেন।
বেশির ভাগ চাষিদের অভিযোগ, যখন কমলার ফুল আসে তখন পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়। এ সময় পর্যাপ্ত পানি সেচের ব্যবস্থা না থাকায় কমলার ফুল ও খুদে ফলসহ লেবুজাতীয় সব ধরনের ফসল ঝরে যায়। কৃত্রিম কোনো পন্থা অবলম্বন করে কিছু দমন করা গেলেও ফসলের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ঝরে যায় গান্ধি পোকার আক্রমণে। এ পোকা দমনের জন্য নেই কোনো কীটনাশক বা বালাইনাশক। প্রতিরোধব্যবস্থা না থাকায় ফলশূন্য হয়ে যাচ্ছে প্রতিটি গাছ।
বিগত বছরে কমলার মৌসুমে জুড়ী উপজেলার হায়াছড়ায় কমলা ও বাতাবিলেবুর বাগান পরিদর্শন করেন লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক। সেখানে মাঠে কমলা চাষিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। একাধিক কৃষকের মতামতও নেন। কমলা চাষিদের বিভিন্ন মতামত শুনেন ওই কর্মকর্তা। এরপর সময়মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। তখন বেশিরভাগ কৃষকের অভিমত ছিল গান্ধিপোকা দমনের জন্য বিশেষ কোনো পন্থা কৃষি দপ্তর থেকে সহায়তা করা। তবেই চাষিরা কমলার ফলন ভালোভাবে উপহার দেবে। কৃষি দপ্তরের কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে বরাবরের মতো হতাশায় দিন কাটছে কমলা চাষিদের।
গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের কচুরগুল, লালছড়া, রুপছড়া, হায়াছড়া, শুকনাছড়া, জড়িছড়া ও ডোমাবাড়ী গ্রামে রয়েছে ছোট বড় প্রায় শতাধিক কমলার বাগান। এ এলাকার প্রবীণ কয়েকজন কমলা চাষিদের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, আগের মতো এখন আর কমলা হয় না। বিগত বছরগুলোতে কমলার বাম্পার ফলন হলেও বিক্রি নিয়ে শঙ্কা ছিল। রাস্তায় পুলিশ ও বিডিআর আটক করে বলতো এগুলো ভারতীয় কমলা। তখন ক্ষোভে অনেকেই কমলার গাছ কেটে ফেলতেন। যখন কমলা বিক্রি করা যায় না; গাছ রেখে কী লাভ; এমন চিন্তা বিরাজ করত চাষিদের মাঝে।
রুপাছড়া গ্রামের তোফায়েল আহমদ বলেন, ছোটবেলা দেখতাম গাছে কমলা পেঁকে গাঁদা ফুলের মতো হলুদ বর্ণ ধারণ করত। তবে এখন বিগতদিনের মতো হয় না। কারণ এখন রোগবালাই বেশি, বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণে কমলা পাকার আগেই ঝরে যায়। বিশেষ করে গান্ধিপোকা নামে একটি বিষাক্ত পোকার আক্রমণে কমলার রস হওয়ার সময় গাছ থেকে ঝরে যায়। এ রোগের নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক না থাকায় পোকা দমন করা সম্ভব হয় না। সেজন্য কমলা চাষ করতে চাষিরা আগ্রহহীন।
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল আলম খান বলেন, আমরা কমলা বাগান পরিদর্শন করেছি। কিছু কমলা ঝরে যাচ্ছে, এটা ঠিক। তবে এ কমলা ঝরে যাওয়ার কারণ পটাশিয়ামের ঘাটতি। চাষিদের বলেছি এক লিটার পানির সঙ্গে চার গ্রাম পটাশিয়াম মিশিয়ে গাছে দেয়ার জন্য। তাহলে এই ঝরে পড়া কমবে।
তিনি আরো বলেন, গান্ধিপোকা ফসল পাকার সময় আক্রমণ করে। এটি আরো মাসখানেক পরে হতে পারে। আমরা মাঠ পর্যায়ে চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এ মাসের শেষের দিকে লেবু জাতীয় ফসলের ওপর চাষিদের নিয়ে একটি ট্রেনিং আছে। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন সময় মতবিনিময় ও ট্রেনিং করি কৃষকদের নিয়ে।
লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ ও বৃদ্ধি প্রকল্পের পরিচালক ফারুক আহমদ বলেন, বিভিন্ন সমস্যার কারণে গাছ থেকে ফল ঝরে পড়ে। প্রথমে তীব্র খরা, তারপর বিভিন্ন পোকার আক্রমণ তো আছেই। আর চাষিরা কমলার গাছে সঠিক পরিমাণে সুষমভাবে কীটনাশক ব্যবহার করছে না। আর বিশেষ করে লাঠিটিলা এলাকায় কাঠবিড়ালির উৎপাত আছেই। এজন্যই সমস্যাগুলো হচ্ছে। তবে আমরা এখন সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি মাল্টা চাষে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য