-->
শিরোনাম
অবহেলিত জনপদ চলবল খাঁ

বাঁশের সাঁকোই ভরসা, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

নিত্যানন্দ হালদার, মাদারীপুর
বাঁশের সাঁকোই ভরসা, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ
মাদারীপুরের চলবল খাঁ জনপদে বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা

মাদারীপুরের ডাসারের অবহেলিত এক জনপদের নাম চলবল খাঁ। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত একই জনপদের দুটি গ্রাম। একটি গ্রামের নাম দক্ষিণ চলবল খাঁ, অপরটির নাম উত্তর চলবল খাঁ। দুবছর আগে মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলা থেকে ৫টি ইউনিয়ন কেটে নিয়ে গঠন করা হয় ডাসার উপজেলা।

 

এই নবগঠিত ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের একটি অঞ্চলের নাম চলবল খাঁ। গ্রামটি নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বছরের ৬-৭ মাসই জলমগ্ন থাকে। প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই গ্রামে পাঁচ সহস্রাধিক মানুষের বসবাস। পাকা বা কাঁচা সড়ক না থাকায় বছরে ১২ মাসই এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি, এক পাড়া থেকে অন্য পাড়া যাতায়াতে বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা। এ কারণে দুর্ভোগে রয়েছে হাজারো মানুষ।

 

এই অঞ্চলে প্রায় দেড়শ বছর আগে থেকে জনবসতি গড়ে উঠলেও আজ পর্যন্ত এই অভাবনীয় উন্নয়নের যুগে পাকা সড়ক দূরের কথা, কোনো কাঁচা সড়কও নির্মিত হয়নি। গ্রামের মানুষ শুষ্ক মৌসুমেও জমির আইল পথ দিয়ে চলাচল করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে চলাচলের জন্য একমাত্র ডিঙি নৌকাই ভরসা তাদের। ফলে দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।

 

গ্রামের বাসিন্দারা জানায়, জনসাধারণের উদ্যোগে ১৯৮৬ সালে উত্তর চলবল উচ্চ বিদ্যালয় এবং ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ চলবল উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই দুই বিদ্যালয়ের সঙ্গেই রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই চারটি বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া গ্রামটিতে রয়েছে ছয়টি মন্দির ও একটি আশ্রম। আশ্রমে অনেক ভক্তের আগমন ঘটে।

 

কিন্তু এ অঞ্চলে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই, বর্ষায় ডিঙি নৌকা, আর শুষ্ক মৌসুমে কর্দমাক্ত ক্ষেতের আইল পথই যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। উন্নত স্বাস্থ্যসেবা তো দূরের কথা, ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবাও এখানে অনুপস্থিত।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের দুটি স্কুলের পাশে ছোট্ট দুটি বাজার গড়ে উঠেছে। তবে নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা। এমনকি একটি ফার্মেসিও চোখে পড়েনি। মুমূর্ষু কোনো রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে নিতে গেলেও পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরে নিতে হয় ডিঙি নৌকায় করে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও ঝুঁকি নিয়ে ডিঙি নৌকায় করে চলাচল করতে হয়। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। কয়েক যুগ পেরিয়ে গেলেও এলাকাবাসীর ভাগ্যে জুটেনি একটি সেতু, রাস্তা, কালভার্ড। বাঁশের সাঁকো দিয়েই পারাপার হচ্ছে কয়েক হাজার পরিবার।

 

কয়েক দফায় সেতুর জন্য মাটি পরীক্ষা করা হলেও হয়নি সেতু। এলাকাবাসী জানান, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এই দুর্গম এলাকার উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। নবগ্রাম সড়ক থেকে উত্তর ও দক্ষিণ চলবলের মধ্য দিয়ে একটি দুই লেনের সড়ক নির্মাণের সমীক্ষা করা হয়। পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণ চলবল বড় দুটি খালের ওপর দুটি বড় সেতু নির্মাণ করতে টাকা বরাদ্দ করেন।

 

সড়কের সমীক্ষার পাশাপাশি ব্রিজের কাজ শুরু হয়। ব্রিজের পিলারের কাজ হলেও ঢালাই বাকি থাকে। সৈয়দ আবুল হোসেন যোগাযোগ মন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় এই প্রকল্প। আর বরাদ্দের টাকা অন্যত্র কেটে নেয়া হয় বলে জানান এলাকাবাসী। বর্তমানে নির্মাণাধীন সেতুর পিলারগুলো অকোজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

 

সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গেছে সড়কের সমীক্ষার কাজও। ফলে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ আর লাঘব হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ চন্দ্র মল্লিক বলেন, আমার বয়স ৭০ পেরিয়ে যাচ্ছে। এই বয়সে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে ভয় লাগে।

 

রতন বালা নামে এক বাসিন্দা বলেন, প্রতিনিয়ত কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে যায় এটি পার হয়ে। সাবেক চেয়ারম্যান বিভূতি ভূষণ বাড়ৈ বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা যাতায়াত ব্যবস্থা। মোটামুটি ১২ কিঃমিঃ রাস্তা হলে আমরা যাতায়াত করতে পারি। আমরা সারা বছর নৌকা বেয়ে স্কুল কলেজে লেখাপড়া করেছি।

 

বিশিষ্ট সমাজসেবক মিহির কুমার হাওলাদার বলেন, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সংসদে থাকা অবস্থায় এই এলাকায় কিছু উন্নয়ন হয়েছে। পরবর্তীতে আর একটি রাস্তা ও দুটি ব্রিজের বরাদ্দ হয়েছিল। ব্রিজের পিলারও হয়েছে, শুধু ব্রিজের ঢালাই বাকি ছিল। আবুল হোসেন চলে যাওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে যায় এবং বরাদ্দ টাকা কেটে অন্যত্র নিয়ে যায়।

 

এলজিইডির ডাসার উপজেলা প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক প্রকল্পে এই গ্রামের সড়কটি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে ডিও লেটার পাঠাব। সেই সঙ্গে তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।

 

ডাসার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ আফরোজ বলেন, আমি এখানে নতুন আসছি। চলবল খাঁ মৌজার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কথা আমি শুনেছি। আমি খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টা দেখব।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version