বারোমাসি আম চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
বারোমাসি আম চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের
পাইকগাছায় আম বাগানে শোভা পাচ্ছে আম

খুলনার পাইকগাছায় বারোমাসি আমের ফলন ভালো হয়েছে। আম বাগানে মুকুলের সঙ্গে শোভা পাচ্ছে আম। গাছের এক ডালে মুকুল তো অন্য ডালে আম ঝুলছে। আমের আকার এবং রঙও হয়েছে বেশ আকর্ষণীয়। শরতের এ সময়ে বাগানে গাছ ভরা আম ছড়াচ্ছে আকর্ষণ ও সৌরভ। গাছে বারোমাস আম ধরে বলে এ আমের নাম রাখা হয়েছে বারোমাসি।

 

একই গাছে মুকুল, গুটি ও পাঁকা আমের নজরকাড়া দৃশ্য দেখতে কৌতুহলীরা ভিড় করছে। বারোমাসি আমের ফলন ভালো হওয়ায় আম বাগানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাইকগাছায় এখন যেসব আমগাছে মুকুল ধরেছে, সেসব আম গাছ থাইল্যান্ডের কাটিমন জাতের। এ জাতের গাছ থেকে বছরে ৩ বার আম পাওয়া যায়। নভেম্বর, ফেব্রুয়ারি ও মে মাসে গাছে মুকুল আসে এবং মার্চ-এপ্রিল, মে-জুন এবং জুলাই-আগস্ট মাসে ফল আহরণের উপযোগী হয়। ফল লম্বাটে এবং প্রতিটি আমের গড় ওজন ২০০-৩০০ গ্রাম হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় ত্বক হালকা সবুজ রঙের এবং পাকলে হলদে সবুজ ভাব হয়।

 

দেশে এখন অন্তত বারোমাসি ৭টি জাতের আম চাষ হচ্ছে, যেগুলোকে অসময়ের আম বলা হয়। কাটিমন ছাড়া বাকি জাতগুলো হলো বারি-১১, কিং অব চাকাপাত, কিউজাই, বানানা ম্যাঙ্গো, তাইওয়ান গ্রিন, মিয়াজাকি অর্থাৎ সূর্যডিম। এসব আমের যেমন বাহারি নাম, দেখতেও তেমন নজরকাড়া। অসময়ের আমের মধ্যে এখন দুটি জাতের বাগান বেশি হচ্ছে। থাই কাটিমন ও বারি-১১। বারি-১১ বারোমাসি জাতের আম সারা বছরই ফল দিয়ে থাকে। আম গাছটির উচ্চতা ৬-৭ ফুট। গাছটির কোনো অংশে মুকুল, কিছু অংশে আমের গুটি, কিছু অংশে কাঁচা আম, আবার কোথাও পাঁকা আম।

 

একটি গাছেই ফুটে উঠেছে আমের ‘জীবনচক্র’। এটি খেতে সুস্বাদু, তবে একটু আঁশ আছে। ফলের শাঁস গাঢ় হলুদ বর্ণের। এ জাতের ৪-৫ বছর বয়সি গাছ থেকে প্রতিবার ৬০-৭০টি আম আহরণ করা যায়। এছাড়াও এ জাতের একটি গাছে বছরে প্রায় ৫০ কেজি পর্যন্ত আম হয়ে থাকে। বারি আম ১১ এর এক বছর বয়সি গাছে আমের মুকুল আসে। আম গাছের একটি থোকার মধ্যে ৫-৬টি আম থাকে। আমের উচ্চফলনশীল এ জাতটি বাংলাদেশের সব এলাকায় চাষ উপযোগী। আমের আকার এবং রঙও হয় বেশ আকর্ষণীয়।

 

উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এলাকায় বারোমাসি আমের একক কোনো বাগান গড়ে উঠেনি। তবে বিভিন্ন গ্রামে গাছ লাগানো হয়েছে। আরো জানা গেছে, ১০/১২ বছর আগে নার্সারির মালিক আক্তারুল দো-ফসলি আমের আবাদ করে এলাকায় সাড়া ফেলে। এরপর পাইকগাছার রজনীগন্ধা নার্সারির মালিক সুকনাথ পাল ২০২০ সালে বারোমাসি আমের চারা রোপণ করেন। রোপণের পরের বছরেই ফল ধরে।

 

এ বছর তার আম বাগান থেকে প্রায় ১০ মণ আম বিক্রি করেছেন। তার নার্সারিতে প্রায় ২ হাজার বারোমাসি আমের ছোট ছোট চারা রয়েছে। ছোট চারা ৩০-৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। সততা নার্সারির মালিক অশোক পালের নার্সারিতে বারোমাসি কাটিমন জাতের আমের ফলন ভালো হয়েছে। ৬/৭ ফুট একটি গাছে ১৫/২০টি করে আম ধরেছে।

 

তার নার্সারিতে প্রায় শতাধিত বারোমাসি আমের চারা রয়েছে। ছোট চারা ৫০ টাকা ও ৬/৭ ফুট উঁচু চারা ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমগাছগুলোতে সারা বছর আম ধরে। গাছে কখনো মুকুল, কখনো আমের গুটি আর কখনো বড় আম দেখা যায়। বাগানে আমের জাতের মধ্যে রয়েছে থাই কাটিমন, বারি-৪, কিউজাই ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো।

 

পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বারি আম-১১ বা বারমাসি আমের এ জাতটি এখন বাংলাদেশের সব উদ্যানত্তত্ব গবেষণাকেন্দ্রে ও নার্সারিতে চাষ হচ্ছে। আমের এ জাতটি দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য দেশের সকল আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজ করে যাচ্ছে। পাইকগাছার উপকূল এলাকায় যার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে নার্সারি মালিকরা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য