টানা বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢল এবং ভারতে গজলডোবার সব গেট খুলে দেয়ার কারণে তিস্তার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির চাপ সামলাতে ডালিয়া ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে তিস্তা নদী কর্তৃপক্ষ। এতে তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, ফসলি জমি। হাঁটু পানিতে ডুবে আছে ঘরবাড়িসহ উঠতি ফসল।
এদিকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া প্রায় ২৫টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলো মধ্যে বয়স্ক, শিশু ও হাঁস-মুরগি গরু, ছাগল গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে এসব পরিবার। ৬টায় তিস্তার ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১০ ও রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পাউবো।
শনিবার সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মিটার ২৫ সেন্টিমিটার। রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ২৯ মিটার ১৬ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ৫২ মিটার ১৫ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রোববার দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে ৫১ মিটার ৯৮ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং কাউনিয়া পয়েন্ট ২৯ মিটার ২২ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গঙ্গাচড়া উপজেলার পূর্ব ইচলি, পশ্চিম ইচলি, কেল্লারপাড়, কাশিয়াবাড়ীর চর, চল্লিশসাল, মটুকপুর, চিলাখাল, বিনবিনা, চর নোহালী, বাগডহরা, বৈরাতী, পাইকান, ছালাপাক, ঝয়রামওঝা, আলালের চর, ইশোরকোল, খলাইয়ের চরসহ ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার।
তলিয়ে গেছে ধান বীজ তলাসহ বিভিন্ন ফসল ও সবজি ক্ষেত। ভেসে গেছে পুকুর, জলাশয় ও মৎস্য খামারের মাছ। ভাঙন হুমকিতে পড়েছে ওইসব এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, বাড়িঘর, আবাদি জমি, গাছপালা, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ও বেড়িবাঁধ।
পানিবন্দি পরিবারগুলো বাড়িঘর ছেড়ে ঠাঁই নিয়েছে উঁচু স্থানে ও পাউবো বাঁধে খোলা আকাশের নিচে। দেখা দিয়েছে মানুষ ও পশু-পাখির নিরাপদ খাদ্য সংকট। বন্যাকবলিত লোকজন আশঙ্কা করছেন পানিবাহিত রোগের। এদিকে কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের ৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরের মহির মিয়া বলেন, ‘নদীর পানি খুব বাড়ছে। ঘরোত ঢুকি থাকার মতো অবস্থা নেই। আজ রাইতোত ঘুমবারে পাই নাই। কয়দিন থাকি পানি বাড়ে আবার কমে। কি একটা জালাত পরি আছি।’
লক্ষীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলির মজিরন বেগম বলেন, ‘দুইদিন ধরে নদীর পানি বাড়েচোল। হামার বাড়ির আগনা (উঠান) রাস্তা পানিতে ডুবি গেইছে। হাঁস-মুরগি, গরু ছাগল নিয়া বিপদত আছি।’রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, ভারতের উজানে পানি বৃদ্ধির কারণে গজলডোবা ব্যারেজের সব গেট পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই খুলে দেয়ায় শুক্রবার থেকে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। ফলে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে ৪৪টি গেটের সব জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, তিস্তার পানি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। সে কারণে দুর্গম চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরে ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ মাসে আরও দু-একদিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য