-->

করপোরেট সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে পোল্ট্রি খামার

মো. ইব্রাহিম শেখ, চট্টগ্রাম
করপোরেট সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে পোল্ট্রি খামার
ব্রয়লার মুরগিকে খাবার দিচ্ছেন খামারি

চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন হাটবাজারে বর্তমানে প্রতিডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। যা চলতি মাসের শুরুতে ১৯০ টাকা এবং ডিম ১৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। এর আগে প্রতি কেজি মুরগি ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় চট্টগ্রামে। এ নিয়ে শুধু ক্রেতা নয়, বিক্রেতা ও খামারিদের মাঝেও ক্ষোভের অন্ত নেই।

 

কারণ দাম বাড়ার কারণে বাজারে মুরগি ও ডিম বিক্রি কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে ব্যবসায়ী ও খামারির ওপর। এতে বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার অনেক খামার। খামারিদের অভিযোগ, পোল্ট্রি খামার এখন খামারিদের হাতে নেই। এটি করপোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।

 

মূলত হ্যাচারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে এক দিন বয়সি মুরগির বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। একই সাথে ডিমের দামও। ফলে বাজারে ডিম ও মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রিটন চৌধুরী এ তথ্য জানান।

 

তিনি বলেন, বর্তমান বাজার মূল্যে একটি ডিমের খুচরা দাম পড়ে সাড়ে ১৩ টাকা। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে যদি দ্বিগুণ খরচও ধরা হয় তাহলে মুরগির এক দিন বয়সি একটি বাচ্চার দাম ২৭ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বর্তমানে এক দিন বয়সি একটি বাচ্চা খামারে তুলতে হলে একজন খামারিকে গুনতে হচ্ছে ৮২ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত। মূলত চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কমিয়ে সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বাচ্চার দাম বাড়ানো হয়েছে। খামারিরা এজন্য পোল্ট্রি খাতের ওপর করপোরেটের থাবা এবং সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন।

 

রিটন চৌধুরী আরো বলেন, একসময় তিনি বিভিন্ন দোকানে দৈনিক দুই হাজারের বেশি মুরগি সরবরাহ করতেন। মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় এই সংখ্যা এখন ৭০০ থেকে ৮০০ এর মধ্যে নেমে এসেছে। দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষ মুরগির মাংস খাওয়াও কমিয়ে দিয়েছে।

 

তিনি জানান, শুক্রবার মুরগির এক দিন বয়সি বাচ্চা ডিলার থেকে খামারিরা কিনেছেন প্রতিটি ৮৫ টাকায়। কো¤পানির দাম ছিল ৭৬ থেকে ৭৮ টাকা। প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, মুরগি ও ডিমের দাম বাড়লেও তারা ব্যবসা করতে পারছেন না। করপোরেট ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে নিঃস্ব হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা। পোল্ট্রি শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় সরকারি উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করছেন তারা।

 

খামারিরা জানান, কাজী ফার্মস, আফতাব, সিপি, প্যারাগনসহ কয়েকটি কোম্পানি খামারির কাছে বাচ্চা বিক্রি করে। আবার নিজেরাও চুক্তিভিত্তিক মুরগি উৎপাদন করে। খামারিকে নিঃস্ব করে তারা বাজার দখল করে অর্থ তুলে নেয়। ফিড, বাচ্চা এবং খামারিদের শ্রম মিলে বাজারে এখন মুরগির যে দাম তাকে ন্যায্য দাম বলা যায় না।

 

মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রভিটার জেনারেল ম্যানেজার ফজলুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন ধরে মুরগির এক দিন বয়সি বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। তা ডিলার এবং সাব ডিলার পর্যায়ে গিয়ে হয়তো আরো ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়তে পারে। মূলত বাচ্চার সংকট রয়েছে। অপরদিকে চাহিদা বেশি। তাই বর্তমানে এক দিন বয়সি বাচ্চার দাম একটু বেশি। ভোক্তা অধিকার যে রেট নির্ধারণ করে দিয়েছিল মুরগি সে দামে বিক্রি হচ্ছে না। কাঁচামাল চাহিদা ও জোগানের ওপর নির্ভর করে।

 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও নাহার এগ্রো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রকিবুর রহমান টুটুল বলেন, বিভিন্ন ধরনের বাচ্চার দাম বিভিন্ন। ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম প্রতিটি ৭০ টাকা। তবে ডিলাররা বেশি দাম নিলে উৎপাদনকারী কোম্পানিসমূহের কিছুই করার থাকে না।

 

তবে সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কিছুটা কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্রিডার ফার্মগুলোকে এক সময় মুরগির বাচ্চা ধ্বংস করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ ওই সময় মুরগির বাচ্চার কোনো ক্রেতা ছিল না। অনেকেই প্যারেন্ট স্টক বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন চাহিদা বেড়ে গেলেও হঠাৎ করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বাড়তি হলেও লেয়ার (ব্রাউন) ৩০ টাকা, লেয়ার (সাদা) ৩০ টাকা এবং কক মুরগির প্রতিটি বাচ্চা ১৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে রকিবুর রহমান টুটুল বলেন, বাজারে লেয়ার মুরগির দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রয় করছেন বিক্রেতারা। অথচ এই মুরগির দাম বাড়ার কথা নয়।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাট মুরগির ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, ব্রয়লারে তো আমরা লোকসান দিচ্ছি। লেয়ার একটু বেশি দামে বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্রয়লারের চেয়ে লেয়ারের চাহিদা কম হওয়ায় বেচা-বিক্রিও কম বলে জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version