পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলামকেন্দ্র চালু হচ্ছে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের এ চা নিলামকেন্দ্র উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
স্থানীয় চা-বাগানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, নিলামকেন্দ্রটি চালু হলে উৎপাদিত চা আর চট্টগ্রাম-সিলেটে পাঠানো লাগবে না। এতে খরচ কমে আসবে। নিলামকেন্দ্রে উন্মুক্ত কেনাবেচায় কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য পাবেন ক্ষুদ্র চা চাষিরা। এতে বদলে যাবে উত্তরের অর্থনীতি। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান।
দেশের উত্তরের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড়ে ২০০০ সালে সমতল ভ‚মিতে ক্ষুদ্র পরিসরে চা চাষ শুরু হয়েছিল। এখনকার সমতলের আবহাওয়া এবং মাটি দার্জিলিং জেলার মতো হওয়ায় ২৩ বছরে আবাদ বেড়েছে কয়েক গুণ। এক সময়ের পতিত গোচারণ ভূমি এখন সবুজ চায়ের বাগানে পরিণত হয়েছে। তবে দীর্ঘদিনেও চা নিলামকেন্দ্র চালু না হওয়ায় পাতার ন্যায্য দাম না পাওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন চা চাষিরা। এছাড়া এখানকার উৎপাদিত চা বিক্রির জন্য নিতে হতো চট্টগ্রাম আর সিলেটের শ্রীমঙ্গলের নিলামকেন্দ্রে। এতে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ হতো।
জেলায় বর্তমানে ১০ হাজার ২৪০ একর জমিতে চায়ের আবাদ হচ্ছে। ৮টি নিবন্ধিত ও ২০টি অনিবন্ধিত চা-বাগানের পাশাপাশি ৭ হাজার ৩৩৮টি ক্ষুদ্রায়তন এবং ১ হাজার ৩৬৮টি ক্ষুদ্র চা-বাগান গড়ে উঠেছে। পঞ্চগড়ের পাশাপাশি ঠাকুরগাও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলাতেও চা চাষ শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১২ হাজার ৭৯ দশমিক ৬ একর জমিতে ৩০টি বড় চা-বাগান এবং ৮ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র বাগান গড়ে উঠেছে। এছাড়া উৎপাদনে চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চলে পরিণত হয়েছে এটি।
আবদুল খালেক ও মেহেদী হাসান মামুন বলেন, নিলাম বাজারে চা কারখানা মালিকরা যেন উন্নতমানের চা তোলে। কারণ কারখানায় উৎপাদিত উন্নতমানের চা কর ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করে নিম্ন মানের চা নিলামে তোলায় চাষিরা প্রকৃত দর পাওয়া থেকে এতদিন বঞ্চিত ছিল। আশা করছি আমরা এবার কাঁচা চা পাতার ন্যায্য মূল্য পাব।
তেঁতুলিয়া সদরের ক্ষুদ্র চা চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, কারখানা মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে তিন-চার বছর ধরে তার মতো ক্ষুদ্র চাষিরা। কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছিলেন না। দাম কম দেয়ার পাশাপাশি ওজন ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কম দেখিয়ে নাম পরিশোধও করা হতো। নিলামকেন্দ্র চালু হলে উপযুক্ত দাম পাবেন বলে আশা।
পঞ্চগড় সাজেদা রফিক চা কারখানার পরিচালক আরিফুজ্জামান সুমন বলেন, নিলামকেন্দ্রটি চালু হলে চা কারখানা মালিকদের পরিবহন খরচ কমে যাবে। ভালো মানের কাঁচা পাতা কিনে উন্নতমানের চা তৈরি করতে পারলে লোকাল অকশন মার্কেটে ভালো দাম পাওয়া যাবে। চা পাতা উৎপাদনকারীরাও ভালো দাম পাবেন।
ইন্ডিগো ব্রোকারস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদুর রহমান বলেন, আমরা আশা করছি এ নিলামকেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে সবাই সুফল পাবে। আর নিলামের মাধ্যমে শতভাগ চা বিক্রি হলে সবাই সঠিক দাম পাবে।
পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, গত বছরের ২৩ অক্টোবর সরকার পঞ্চগড়ে নিলামকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়ার পরই কাজ শুরু করে চা বোর্ড। এরই মধ্যে ওয়্যার হাউস, ব্রোকার হাউসের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনলাইন অ্যাপ তৈরিসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, অনলাইনভিত্তিক নিলামকেন্দ্রটি চালু হলে চাষিরা এক স্থানে বসেই চায়ের দাম কোথায় কী রকম চলছে, তা দেখতে পারবেন। উন্মুক্ত নিলাম হওয়ায় চা চাষিদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যের বাইরে কাঁচা পাতা কেনার আর সুযোগ থাকবে না। এতে উত্তরের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে বলে আমরা মনে করি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য