-->
শিরোনাম

বিটল পোকা চাষে সফল বরিশালের চাষিরা

এসএলটি তুহিন, বরিশাল
বিটল পোকা চাষে সফল বরিশালের চাষিরা
বিটল পোকা

প্রথমবারের মতো এবার বরিশালেও বিটল পোকার চাষ শুরু হয়েছে। এর আগে কেউ আর বিটল পোকার চাষ করেনি। এজন্য তার এই খামার দেখতে আসছেন অনেকেই। এই পোকা চাষে ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছেন তারা। এতে করে মাছ, মুরগি, গরু-ছাগলের খাবারের খরচ অনেকটা কমে যাবে বলে দাবি বিটল পোকা চাষিদের। যে কারণে ইতিমধ্যেই বিটল পোকা চাষে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

 

বিটল পোকা প্রথম আবিষ্কার করে ইসরায়েল। তারপর চীনসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে এটির চাষাবাদ শুরু হয়। এটি দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের কাঠপোকার মতো। তবে পার্থক্য এটাই যে, এ পোকা উড়তে পারে না। তাই এই পোকা বাড়ির যেকোনো জায়গায় সহজে লালন পালন করা যায়। এই পোকা হাঁস, মুরগি ও কবুতরকে সরাসরি খাওয়ানোর পাশাপাশি সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটিকে পাউডার তৈরি করেও হাঁস-মুরগিকে খাওয়ানো যায়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন খামার থেকে প্রতি কেজি বিটল পোকার পাউডার ৩ হাজার টাকা থেকে ৫০০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এটি সারা দেশে ব্যাপক পরিমাণে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ এখনো শুরু হয়নি।

 

জানা যায়, ২ বছর আগে বরিশালের ২ উদ্যোক্তা পিটার গোমেজ ও অপু গোমেজ বরিশাল শহরে বিটল পোকার চাষ শুরু করেন। তাদের খামার দেখে বরগুনার একজন মাহবুবুল আলম মান্নুও ৩ মাস আগে ১ হাজার পোকা নিয়ে বরগুনাতে পরীক্ষামূলকভাবে খামার শুরু করেছেন। এই পোকা ৮ মাস পর্যন্ত ডিম পাড়বে। এই ডিমই লার্ভা। একটি লার্ভায় প্রায় ৮০টি ডিম থাকে।

 

বরিশালের পুলিশ লাইন আমবাগান এলাকায় অপু গোমেজের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তিনি তার নিজস্ব বেডরুমেই এই পোকার চাষ করছেন। এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে তবেই তিনি ও তার ভাই পিটার এই বিটল পোকার চাষে মনযোগী হয়েছেন। এই পোকা ৮ মাস পর মারা যায়। এই ৮ মাসে লক্ষাধিক ডিম দিয়ে যায়। খুব কম খরচে এবং খুব সহজেই অভিনব পদ্ধতিতে বিটল পোকার চাষ করা যায় এবং বিটল পোকায় আছে ৪০-৭০ ভাগ প্রোটিন। এই পোকা চাষে কোনো ময়লা ও দুর্গন্ধ হয় না বলে জানান বরিশালের উদ্যোক্তা চাষি অপু গোমেজ।

 

তিনি বলেন, এই পোকা আপনার হাঁস, মুরগি, কোয়েল পাখি, লাভ বার্ড ও মাছের খাদ্যে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবে। বর্তমানে মৎস্য, পোল্ট্রি ও হাঁস-মুরগি পালনের খাদ্য ব্যয় ও রোগবালাই অনেক বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি খামারের ৮০ ভাগ ব্যয় হচ্ছে খাদ্যের পেছনে। গুণগতমান সম্পন্ন খাদ্যের ব্যাপক সংকট রয়েছে। উচ্চমূল্যে পোল্ট্রি খাদ্য কিনতে হচ্ছে। মূলত এজন্যই অধিকাংশ খামারিদের প্রায়ই লোকসান গুণতে হয়। তবে এখন আর হাঁস, মুরগি, কবুতর, পাখি ও মাছের প্রোটিনের অভাব নিয়ে কারো চিন্তা নেই। খুব কম খরচে, সহজেই এখন বিটল পোকার চাষ করা যাচ্ছে। আমি আমার খামারে এখন এই বিটল পোকাই বেশি ব্যবহার করছি।

 

তিনি আরো বলেন, বরগুনার মান্নুও আমার থেকে কিছু বিটল পোকা কিনে নিয়ে সে এখন সফলতার পথ খুঁজে পেয়েছেন। আমি ঢাকার এক ব্যবসায়ীর থেকে ৩০ টাকা দরে প্রথমে লার্ভা কিনে এনেছিলাম। আজ আমার নিজের খামারে ব্যবহারের পরও ২৫ হাজারের বেশি বিটল পোকা রয়েছে।

 

অপু গোমেজের এই চাষাবাদ সম্পর্কে বরিশালের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ শওকত ওসমান বলেন, বরিশালে বিটল পোকার চাষ একটি অভিনব উদ্যোগ। দেশীয় খামারিদের জন্য এ পোকার সরাসরি চাহিদা এখনো তৈরি হয়নি। ভালো বাজার তৈরি হলে বিভিন্ন খামারের খাদ্য-পুষ্টি চাহিদায় বিটল পোকা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version