-->
শিরোনাম

এক স্কুলের ক্লাস দুই উপজেলায়, বিভ্রান্তিতে শিক্ষার্থীরা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
এক স্কুলের ক্লাস দুই উপজেলায়, বিভ্রান্তিতে শিক্ষার্থীরা
চিলমারীর উত্তর খাউরিয়ার চরে একটি বাড়িতে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক

ব্রহ্মপুত্র নদে চলতি মাসের শুরুতে বিলীন হয়েছে চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের উত্তর খাউরিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। পরে উত্তর খাউরিয়ার চরে অন্যের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুলেখা ইয়াসমিন ও সহকারী শিক্ষক এম এইচ এ হাসান মাহমুদ। একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লা, লায়লা খাতুন ও মোবারক হোসেন রৌমারী উপজেলার চর খেদাইমারী এলাকায় ঘর তৈরি করে কিছু শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাচ্ছেন। এতে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

 

বিদ্যালয়টিতে ১০৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের দু’ভাগে পাঠদান চলছে দুই উপজেলায়। অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যালয়টি ভোটকেন্দ্র হওয়ায় অন্য উপজেলায় স্থানান্তরের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এক হাজারের বেশি ভোটারও দ্বিধায় রয়েছেন।

 

গত ২০ আগস্ট বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহফুজা আক্তার এবং ২২ আগস্ট ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুলেখা ইয়াসমিন কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। জুলেখা ইয়াসমিন জানান, বিদ্যালয়ের ভবন বিলীন হলে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। তাদের নির্দেশে বিদ্যালয়টি উত্তর খাউরিয়ার চরের পশ্চিমে স্থানান্তর করেন তিনি।

 

প্রধান শিক্ষকের ভাষ্য, গত ১২ আগস্ট রৌমারীর খেরুয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু বক্কর ছিদ্দিক এবং এ বিদ্যালয়ের তিন সহকারী শিক্ষক প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় রৌমারীর চর শৌলমারী ইউনিয়নে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করেন। চর খেদাইমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ঘর নির্মাণ করেন তারা। তিনি খাউরিয়ার চর এলাকার মোন্নাফ মিয়ার বাড়িতে পাঠদান করাচ্ছেন।

 

একই ধরনের অভিযোগ করেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহফুজা আক্তার। তার ভাষ্য, বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের বিষয়ে তাকে না জানিয়ে রৌমারীতে নিয়ে গেছেন তিন সহকারী শিক্ষক। বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানালেও ব্যবস্থা নেননি।

 

রৌমারীর খেদাইমারী গ্রামে বিদ্যালয় হলে ব্রহ্মপুত্র নদের দুটি শাখা নদী পার হতে হবে বলে জানায় উত্তর খাউরিয়ার চরের শিশু শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন, বিজয় শেখ ও শিরিনা খাতুন। তারা এ চরেই বিদ্যালয় চায়। অন্যথায় পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে বলে ভাষ্য তাদের।

 

চরের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল মতিন, জোলেখাসহ কয়েকজন বলেন, বিদ্যালয়টি চরেই পুননির্মাণ করতে হবে। শিশুরা ঝুঁকি নিয়ে কেন অন্য উপজেলায় পড়ালেখা করবে? তিন সহকারী শিক্ষক নিজেদের সুবিধার জন্য বিদ্যালয় অন্যত্র নিতে চাচ্ছেন। ভোটকেন্দ্র হওয়ায় নিজের দখলে রাখতেচাচ্ছেন নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ও সদস্য মইনুল ইসলাম। তারা বিদ্যালয়টি রৌমারীতে নেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। নয়ারহাট ইউনিয়নের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইনসাব আলীর অভিযোগ, বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানালে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। শুধু ব্যক্তি ও রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য বিদ্যালয়টি অন্য উপজেলায় নেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।

 

অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সহকারী শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লা। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি রৌমারীর সীমানায় প্রায় ৩৩ বছর ছিল। নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রৌমারীতে স্থানান্তর করেছেন। তারা তিন শিক্ষক সেখানে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামানের ভাষ্য, বিদ্যালয়টি ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হওয়ায় পরীক্ষা ও পাঠদান ব্যাহত হচ্ছিল। পরে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার অনুরোধে সাময়িকভাবে ক্যাচমেন্ট এলাকায় ঘর তোলা হয়েছে। পানি কমলে সবার মতামতে বিদ্যালয়টি পুননির্মাণ করা হবে।

 

চিলমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সালেহ সরকার বলেন, সাময়িকভাবে বিদ্যালয়টি অন্য উপজেলায় নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পানি কমলে অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, এক উপজেলার বিদ্যালয় অন্য উপজেলায় নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version