চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে তিন বছর আগে ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর ঘটা করে চালু হয়েছিল অনলাইন ভিত্তিক ই-অকশন কার্যক্রম। অথচ উদ্বোধনের পর থেকে গত তিন বছরে ই-অকশন হয়েছে মাত্র ৫টি। এছাড়া গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বরের পর এক বছর বিরতি দিয়ে চলতি সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ আবারো ১টি ই-অকশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এবারের ই-অকশনের ২৩টি লটে যেসব পণ্য রয়েছে সেগুলো হলো ইন্ট্রাকো ব্র্যান্ডের ৮২৬ পিস এলপিজি খালি সিলিন্ডার, প্রায় ৩ টন এলাস্টিক ব্র্যান্ড, প্রায় ১২ হাজার ঢেউতোলা প্লাস্টিক শিট, ১০২ জোড়া কোরিয়ান জুতা, ৬৬ হাজার পিস পুরুষদের জন্য এমব্রয়ডারিসহ রেডিমেড গার্মেন্টস পোলো শার্ট, প্রায় ১৬ হাজার পিস পাথরের টাইলস, ৩০০ পিস প্লাস্টিক ব্লক (কংক্রিট পিভিসি ব্লক প্যালেট), ১৭ হাজার পিস পুরুষদের শর্ট এবং শর্ট হাতা রাউন্ড নেক টি-শার্ট, তিয়ানশি লিপিড মেটাবলিক চা, সেল রিজুভেনেশন ক্যাপসুল, গ্রেপ এক্সট্র্যাক্ট ক্যাপসুল, কাচের পুঁতি, ৬০৪ রোল ফেব্রিকস, লোম কাপড়, প্লাস্টিক হ্যাঙ্গার ও টপ হ্যাঙ্গার, কটন ড্রকর্ড, সুতি কাপড়, নিট কাপড় ও ওভেন কাপড়, ব্র্যান্ড নিউ ক্যাপিটাল মেশিনারি, পুরুষদের পোলার ফ্লিস জ্যাকেট ইত্যাদি।
চট্টগ্রাম কাস্টমসে প্রায় প্রতি মাসেই ২/৩টি সাধারণ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে গতানুগতিক কাগজের নিলামের দরপত্র ক্রয় করে হাতে লেখা সেই নিলামের ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হয়। অথচ অনলাইন ভিত্তিক যে সুদূরপ্রসারী চিন্তা করে ই-অকশন চালু করা হয়েছিল তা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের ই-অকশন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উদ্বোধনের পর ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবরের প্রথম ই-অকশনের লট ছিল ১৬টি। সেই ১৬ লটের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরনের ফেব্রিকস, স্ক্র্যাপ, প্লাস্টিক হ্যাঙ্গার, খেজুর, আদা, সোডা অ্যাশ, আয়রন পাইপ ইত্যাদি। পরবর্তী ই-অকশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি। সেই নিলামে ২০ লটের সবগুলোতেই ছিল পেঁয়াজ।
এর পরের তিনটি ই-অকশনই অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিলাসবহুল কার্নেট গাড়ির। ২০২১ নভেম্বরের ৪ তারিখের ই-অকশনে ১১২টি লটে ১১২টি বিলাসবহুল কার্নেট গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছিল। এর পরে গত বছরের (২০২২) ১৩ জুন তারিখে অনুষ্ঠিত কার্নেট গাড়ির ই-নিলামে ১০৮টি গাড়ি রাখা হয়েছিল। সর্বশেষ গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত কার্নেট গাড়ির ই-অকশনে ছিল ৭৮টি গাড়ি। এরপর এক বছর বিরতি দিয়ে আবার ই-অকশন হচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে।
এদিকে ই-অকশন কার্যক্রম নিয়মিত না হওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা বলেন, ই-অকশনের সুফল এখনো পুরোপুরি পাওয়া যায়নি করেকটি কারণে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিয়মিত যারা প্রচলিত নিলামে অংশগ্রহণ করেন তারা অনলাইনে এখনো পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি।
এছাড়া অনলাইনে নিলামে অংশগ্রহণ করলেও বিডারদের জামানত জমা ও ব্যাংকিং কাজে নিলাম শাখায় আসতে হয়। এর বাইরে অন্যতম কারণ হলো যদিও অনলাইন নিলামে পণ্যের ছবি দেয়া হয়, তারপরও কেউই চায় না একটি পণ্য না দেখে কিনতে। এটি একটি সাধারণ বিষয়। উচ্চমূল্য দিয়ে কেউ পণ্য কিনতে আসলে সে নিজ চোখে না দেখে কেউই কিনতে চাইবে না। এসব কারণে ই-অকশন এখনো জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।
তারা আরো জানান ই-অকশনের সুফল পেতে এ কার্যক্রমের দেশব্যাপী প্রচার ও প্রসারের প্রয়োজন আছে। এ পদ্ধতিতে যে কোনো স্থান থেকেই আগ্রহীরা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট উপস্থাপন করে নিলামে অংশ নিতে পারবেন। ফলে একদিকে বাঁচবে সময়, অন্যদিকে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
উল্লেখ্য, ই-অকশন প্রক্রিয়ায় নিলামে অংশগ্রহণকারীরা পণ্যের দর, তালিকা, পণ্যের ছবি দেখতে পায়। প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পূরণ করে ঘরে বসেই নিলামে অংশ নেয়া যায়। একইভাবে ঘরে বসেই দেখতে পারবেন, কোন ক্যাটালগের সর্বোচ্চ বিডার কে হয়েছেন। এতে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই নিলাম কাজ সম্পন্ন করতে পারে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য