-->
শিরোনাম
বাড়ছে নদীর পানি

নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি-ফসলি জমি

আ. রশিদ তালুকদার, টাঙ্গাইল
নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি-ফসলি জমি
টাঙ্গাইলে ড্রেজার চালানোর কারণে নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে

টাঙ্গাইলে হুহু করে পানি বেড়ে ৩টি নদীর বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরো ২টি নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এছাড়াও অনবরত ড্রেজার চালানোর কারণে নদীতীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ১ সপ্তাহের ব্যবধানে শতাধিক ঘরবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে মাটি দেয়ার শর্তে নিউ ধলেশ্বরী নদীতে ড্রেজার চালানোর অনুমতি দিয়ে আবার ভাঙনকবলিত অংশে জিওব্যাগ ফেলে পরস্পর বিরোধী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে।

 

ফলে স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পানি বৃদ্ধির সময়ও নিরবচ্ছিন্নভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে কালিহাতীর নিউ ধলেশ্বরীর দুই তীরের কুর্শাবেনু, গোবিন্দপুর, কদিমহামজানী, চরহামজানী, দশকিয়া, সল্লা, হাতিয়া, আনালিয়াবাড়ী, টুনিমগড়া, ধলাটেঙ্গর, কুড়িঘরিয়া, চরভাবলা, হিজুলী, এলেঙ্গা, বাশী এবং যমুনার তীব্র স্রোতে বাম তীরে ভূঞাপুরে কষ্টাপাড়া, পাটিতাপাড়া, গোবিন্দাসী, খানুরবাড়ী, জিগাতলা, কুঠিবয়ড়া প্রভৃতি গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বীজতলা ও ফসলি জমি ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছে।

 

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ি পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার, নিউ ধলেশ্বরী (ঝিনাই) নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফটিকজানী নদীর পানি নলছোপা পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ও বংশাই নদীর পানি মির্জাপুর পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

পাউবো সূত্র মতে, এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের গোলচত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশ চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে মাটিভরাটের প্রয়োজন হয়। ওই সড়কে মাটি দেয়ার শর্তে জেলা ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশে নিউ ধলেশ্বরী নদীর ৯টি স্থান থেকে ৭ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ড্রেজার দিয়ে মাটিবালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়।

 

এর মধ্যে নিউ ধলেশ্বরী নদীর চরভাবলায় দুইটি পয়েন্টে রিয়া ইন্টারন্যাশনাল ও মেসার্স বিপুল এন্টারপ্রাইজকে ১.৮ কিলোমিটার, আনালিয়াবাড়ীর ৩ পয়েন্টে রিফাত এন্টারপ্রাইজ ও অ্যামনেস্টার লিমিটেডকে ২.১৫ কিলোমিটার, সল্লার ২টি পয়েন্টে রিয়া ইন্টারন্যাশনাল ও মেসার্স তুষার এন্টারপ্রাইজকে ১.২০ কিলোমিটার এবং রিফাত এন্টারপ্রাইজকে জেকারচর ও গুদারাঘাট ২টি পয়েন্টে ১.৪৫ কিলোমিটার নদীখননের অনুমতি দেয়া হয়। উল্লেখিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে পুরো বর্ষায়ও ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। তারা শর্ত ভঙ্গ করে উত্তোলিত বালু ট্রাক দিয়ে চারলেন প্রকল্পে সরবরাহ না করে কালিয়াকৈর ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে।

 

অপরিকল্পিত নদীখনন অব্যাহত রাখায় বেলটিয়া গুদারাঘাট পাউবোর অধিগ্রহণকৃত জায়গার ১৫০ মিটার ও কদিমহামজানী এলাকার ৬০ মিটার জায়গায় ইতোপূর্ব ফেলা জিওব্যাগ ধসে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই দুই স্থানে পুনরায় পাউবো মেসার্স বিপ্লব এন্টারপ্রাইজ ও আমিন ট্রেডিং নামক দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

 

জিওব্যাগ ফেলা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি শহীদুল ইসলাম জানান, হঠাৎ করে জিওব্যাগ ধসে ভাঙন দেখা দেয়ায় নতুন করে গুদারাঘাট এলাকার ১৫০ মিটার ও কদিমহামজানী এলাকার ৬০ মিটার অংশে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

স্থানীয়রা জানান, বর্ষার ভরা মৌসুমে নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে দুই তীরেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাউবো একদিকে খননের অনুমতি দিয়েছে, অন্যদিকে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা করছে। তাদের এই স্ববিরোধী সিদ্ধান্তে তাদের বাড়িঘর হারাতে হচ্ছে।

 

পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মজনু মিয়া জানান, নদীর ৯টি অংশে প্রায় ৫ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার এলাকায় চারলেন প্রকল্পের আবদুল মোনেম লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে ৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ করছে। ভরা বর্ষায় নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে তীরে ভাঙন দেখা দেয়ার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

 

এদিকে, নিউ ধলেশ্বরী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাউবো নির্মিত সল্লা-হাতিয়া নদীরক্ষা বাধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাধটি যাতে কেউ কেটে দিতে না পারে সেজন্য সল্লা ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশরা পালা করে পাহারা দিচ্ছেন। দশকিয়া ইউনিয়নের বালিয়াচরা-পটল বাজার গ্রাম্য রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্গাপুর ইউনিয়নের চর দুর্গাপুর, বেরীপটল, ভৈরববাড়ী, বেলটিয়া ও আলিপুর গ্রামে পানি ঢুকে বাড়িঘর ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।

 

দশকিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক ভূইয়া জানান, নিউ ধলেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে তার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম্য রাস্তা, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। আমন বীজতলাও তলিয়ে গেছে।

 

চারলেন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. রবিউল আউয়াল জানান, প্রকল্পে প্রচুর বালুমাটির প্রয়োজন হওয়ায় জেলা ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে তারা নিউ ধলেশ্বরী নদীর ৯টি স্থানে খনন করে বালুমাটির সংস্থান করেছেন। সেখানে ৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বালু উত্তোলন করে প্রকল্পে সরবরাহ করছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version