-->
শিরোনাম

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী তালের ডোঙা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী তালের ডোঙা
ফরিদপুরের তালের ডোঙা

ফরিদপুরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তালগাছের ডোঙা। বর্তমান প্রজন্মের কাছে তালগাছের ডোঙা শব্দটি যেন এক অদ্ভুত নাম। এক সময় জেলার ৯টি উপজেলার অধিকাংশ খাল-বিল, নদী-নালা ও ডোবাতে তালের ডোঙা চোখে পড়ত। অতীতে এ অঞ্চলের গ্রামে বসবাস করা মানুষের জলপথের প্রধান বাহন ছিল নৌকার পাশাপাশি এ তালের ডোঙা। কিন্তু আগের মতো বর্ষা না হওয়ায় তালের ডোঙা এখন আর চোখে পড়ে না। অথচ দুই থেকে তিন যুগ আগেও নৌকার পাশাপাশি তালের ডোঙার কদর ছিল।

 

বোয়ালমারীর বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কাজের জন্য প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে হয়। এখন বর্ষার দিন। কয়েক মাসের মধ্যে গত শনিবার উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বান্দুগ্রামের বিলে একটি ডোঙা চোখে পড়ল। আর বর্তমান প্রজন্ম ডোঙা কী চেনে না, নামও শোনেনি। এক কথায় ডোঙা যেন আমাদের অঞ্চল থেকে প্রায় বিলুপ্ত।

 

মোড়া গ্রামের অচিন্ত বালা বলেন, আমি অনেক বছর ধরেই একটি ডোঙা ব্যবহার করছি। স্মৃতি হিসেবে এখন টুকটাক ব্যবহার করি। সড়ক যোগাযোগের ব্যাপক উন্নতি হওয়ার সঙ্গে জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় আর ডোঙার দরকার হয় না। তাছাড়া তালগাছের দাম অনেক বেশি, এখন আর আগের মতো পাওয়াও যায় না।

 

বামনগাতী গ্রামের গোপেন বিশ্বাস বলেন, তালের গাছ দিয়ে তৈরি নৌকাকে আঞ্চলিক ভাষায় ডোঙা বা কোন্দা বলা হয়। মূলত যারা গ্রামে বসবাস করেছে তারা তালের ডোঙাকে মাছ ধরার কাজে এবং বিলে শাপলা, শামুক সংগ্রহ অথবা খাল-বিল পারাপারের জন্য ব্যাবহার করত। এখন আগের মতো বর্ষাও নেই। ডোঙার মিস্ত্রিও পাওয়া যায় না। তাই ডোঙা নেই বললেই চলে।

 

বোয়ালমারী উপজেলার টোংরাইল গ্রামের কাঠমিস্ত্রি মঙ্গল শিকারী বলেন, এক সময় টোংরাইল, সুতালীয়, মোড়া, বন্ডপাশা, তেঁতুলিয়া, কদমী গ্রাম এলাকায় বর্ষার জলে চারপাশ ভেসে যেত। চলাচলের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা অথবা তালের ডোঙা। এখন বর্ষাও নেই ডোঙাও নেই। তাই এর চাহিদা নেই বলে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছি। এখন মিস্ত্রিও নেই।

 

এ বিষয়ে শেখর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ বলেন, আমার ইউনিয়নে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। মানুষ আধুনিক হয়েছে। শেখর, রুপাপাত, পরমেশ্বর্দী ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলে বর্ষার সময় তালের ডোঙার ব্যবহার ছিল অহরহ। এখন পানি না থাকায় ডোঙার ব্যবহার ও মিস্ত্রিদের পেশা পরিবর্তন হয়েছে। এক কথায় তালের ডোঙা এ অঞ্চল থেকে যেন বিলুপ্তির পথে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version