উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরে ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে সর্বশেষ বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৯ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) আ. মান্নান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইতোমধ্যেই জেলার সাত উপজেলার মধ্যে ছয় উপজেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চল ও অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় থাকা বাড়িঘরে ঢুকেছে পানি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩৫ হাজার মানুষ। ডুবেছে ১৩২৮ হেক্টর রোপা আমনের খেত। বন্যার পানি প্রবেশ করায় সাময়িক বন্ধ রয়েছে ৪০টিরও অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান। বন্যা মোকাবিলায় ১৫টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রেখেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
জামালপুর জেলা প্রশাসাক মো. ইমরান আহমেদ সরেজমিনে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন। তিনি দেওয়ানগঞ্জের চুকাইবাড়ী ইউনিয়নের গুজিমারী এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুন্নাহার শেফা, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন, এসিল্যান্ড মাহবুব হোসেন, পিআইও মাজহারুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম, এসআই হারুনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিরা তার সাথে ছিলেন।
এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১শ টন চাল, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। অপরদিকে ইসলামপুর উপজেলার যমুনার তীরবর্তী ছয়টি ইউনিয়নের অন্তত বিশটির অধিক গ্রামের ১০ হাজারেরও অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।
বন্যার পানির নিচে একের পর এক তলিয়ে যাচ্ছে রোপণ করা আমনসহ বিভিন্ন শাকসবজির খেত ও বীজ তলা। নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ইসলামপুর-মাহমুদপুর আমতলী-ঢেংগার গড়, উলিলা-পচাবহলা, ইসলামপুর- গুঠাইল সড়কসহ বেশ কটি গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। জামালপুর জেলা প্রশাসক মো. ইমরান আহমেদ ইসলামপুরের বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে চিনাডুলী ইউনিয়নের পশ্চিম বামনা এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর বন্যাদুর্গত পরিবারের মাঝে ৩০০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী, ৫০ প্যাকেট শিশু খাদ্য এবং ২০ বস্তা গো-খাদ্য বিতরণ করেন।
এ সময় উপজেলার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জামাল আব্দুন নাছের বাবুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু, চিনাডুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে যমুনা নদীর পানি বেড়ে ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। দুই উপজেলায় আট হাজার ২৩০টি পরিবারের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুটি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১০৫টি পরিবার। এ ছাড়া ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার এক হাজার ৩২৮ হেক্টর রোপা আমনের খেত।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যেই দুর্গত এলাকাগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে ১শ টন চাল। এ ছাড়া দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। দেয়া হয়েছে গোখাদ্য কেনার টাকাও।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য