সোনালী আঁশে হাসি নেই রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পাট চাষিদের মুখে। পাটের ভালো ফলন না হওয়া ও নায্যমূল্য না পাওয়ায় এ উপজেলার পাট চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। চাষিরা অনেক আশা নিয়ে পাট চাষ করে ছিল। পাট চাষের অনুকূল আবহাওয়া না থাকায় এবার পাটের ফলন কম হয়েছে বলে জানিছে গোদাগাড়ী উপজেলার পাট চাষিরা। পাট চাষিদের অভিযোগ পাটের ফলন কম হলেও, বাজারে পাটের দামও পাচ্ছে না। পাট চাষ করে ধানের ক্ষতি কাটিয়ে উঠা তো দূরের কথা পাট চাষ করে পাট চাষের খরচ উঠানো দায় হয়ে পড়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় পাট চাষ হয়েছে প্রায় ৮৯০ হেক্টরে। গত মৌসুমে এ উপজেলায় পাট চাষ হয়ে ছিল ৮৮০ হেক্টর। উপজেলার চর আষাঢ়িয়াদহ, মাটিকাটা, বাসেদেবপুর ও দেওপাড়া ইউনিয়নে বেশি পাটের চাষ হয়েছে। তার মধ্যে চর আষাঢ়িয়াদহ ইউনিয়নে সব চাইতে বেশি পাট চাষ হয়েছে।
কৃষি অফিস বলছে, বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে এবার পাটের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ৯ মণ করে পাটের ফলন হচ্ছে যা গত বারের তুলনায় বেশি। উপজেলার পিরিজপুর গ্রামের পাট চাষি ফেন্সু বলেন, চলতি মৌসুমে ২ বিঘা পাট চাষ করে ছিলাম। বিঘাপ্রতি ৮ মণ করে পাট হয়েছে। পাটের দাম না পাওয়ায় পাট চাষ করে লাভবান হওয়া যাবে না। কোনো রকম খরচটা উঠেছে।
পাট চাষি সুবেল বলেন, যে আশা করেছিলাম তার চাইতে ফলন কম। বাজারে পাট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ। পাট চাষ করতে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছিল ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত। বাজারে পাটের দাম না থাকায় পাট বিক্রি করে জমি চাষের খরচ উঠায় দায় হয়ে গেছে। তবে অন্যান্য বছরে পাট জাগ দেয়ার জন্য যে কষ্ট পেতে হয়েছিল তা এ বছর নেই।
পুকুর, নালা ও ডোবায় পানি না থাকলেও পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর পানিতে পাট জাগ দিয়ে ছিলাম। ক্ষেত থেকে নদীতে পাট নিয়ে যেতে একটু খরচ বেশি হয়েছে। এদিকে পাট ছাড়ানো রাহাতন বেগম বলেন, টাকার বিনিময়ে নয় পাটকাঠির বিনিময়ে পাট ছাড়িয়ে দিচ্ছি। তিনি বলেন, তিন ভাগ পাট কাঠির মধ্যে আমরা পাই দুই ভাগ আর মালিক নেয় এক ভাগ। তিনি আরো বলেন, আমি পাট ছড়াচ্ছি চুলা ধরানোর উদ্দেশে। এখন বাড়িতে কাজ কম তাই বাড়িতে বসে না থেকে পাট ছড়াচ্ছি।
একাধিক পাট চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাট জাগ দিতে ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা বলছে ইউরিয়া সার ব্যবহার করলে তাড়াতাড়ি পাটে পচন ধরে ও পাটের রঙ ভালো হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহামেদ বলেন, পাট কাটা প্রায় শেষ। জাগ দেয়া চলছে। তবে গত বারের তুলনায় পাটের এবার ফলন বেশি। খোজ নিয়ে জানতে পেরেছি বিঘাপ্রতি ৯ থেকে ১০ মণ পাটের ফলন হচ্ছে। যে সকল কৃষক আগাম পাট চাষ করেছে সে সকল কৃষক পাট কেটে পাটের জমিতে শীতকালিন সবজি চাষ করতে পারবে। ক্ষেতে পাটের পাতা সার হিসেবে কাজে লাগে। আশা করছি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য