-->
শিরোনাম

পদ্মার চরে খামার, সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

মাদারীপুর প্রতিনিধি
পদ্মার চরে খামার, সম্ভাবনার নতুন দুয়ার
পদ্মার চরে কম্পোজিট মিলিটারি ফার্ম

চারদিকে সবুজের সমারোহ। রয়েছে আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। তার মাঝেই শত শত গরুর অবাধ বিচরণ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে খামারের গরু। আকার অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন মাঠে রাখা হয়েছে গরুগুলো। এ দৃশ্য পদ্মা সেতুসংলগ্ন দক্ষিণ চর জানাজাতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা কম্পোজিট মিলিটারি ফার্মের।

 

শিবচর উপজেলার মাদবর চর ইউনিয়নের পদ্মাবেষ্টিত দক্ষিণ চর জানাজাত মৌজায় তিন বছর ধরে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০ একর জায়গায় এই পশু খামার গড়ে উঠেছে। চরের প্রাকৃতিক পরিবেশে খোলা মাঠেই পালন হচ্ছে গরু। খামারের পরিধি বাড়ানোর জন্য শুধু চর জানাজাতেই প্রায় ২০০ একর জায়গা বালু ভরাট করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ৬টি বিশাল টিনশেড ঘর। বসানো হয়েছে দুটি গভীর নলকূপ। যেখানে পালন করা হচ্ছে হলিস্টেইন ফিজিয়ান প্রজাতির প্রায় ৫০০ গরু। এসব গরু সার্বক্ষণিক দেখভাল করতে নিয়োজিত ১৫ জন শ্রমিক।

 

পদ্মার চরের কম্পোজিট মিলিটারি ফার্মের জন্য দেশের বিভিন্ন সেনা খামার থেকে তিন-চার মাস বয়সের বাছুর আনা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু ষাঁড় মোটাতাজা করা হচ্ছে। এসব ষাঁড়কে বিস্তীর্ণ খোলা প্রান্তরে জন্মানো ঘাসের সঙ্গে সাইলেজ (গরুর সুষম খাদ্য) ও দেশীয় খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। খামারে গবাদিপশুর সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য রয়েছে নিজস্ব পশু ডাক্তার। নির্দিষ্ট সময় পরপর এখান থেকে বাছাইকৃত ষাঁড় সাভার মিলিটারি খামারে নিয়ে নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে।

 

চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, এ অঞ্চলে অধিকাংশ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। সেনাবাহিনীর এই ফার্ম দেখে আশপাশ এলাকার প্রান্তিক চাষিসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে গরু লালনপালনের উৎসাহ জেগে উঠেছে। গবাদিপশু পালন করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন অনেকে।

 

জানা যায়, পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে একটি কম্পোজিট মিলিটারি ফার্ম স্থাপনে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর রাজধানীর সেতু ভবনে সেতু কর্তৃপক্ষ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বিশাল পরিসরে কম্পোজিট পশু খামার গড়তে পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণ করা জমি থেকে ২ হাজার ১৫৮ দশমিক ৫৩ একর জমি সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করে সেতু কর্তৃপক্ষ।

 

সেনাবাহিনীর এই প্রকল্পে ডেইরি ফার্ম, বিফ ফার্ম, ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট ফার্ম, মহিষ ফার্ম ও ব্রিডিং সেন্টার স্থাপনের কথা রয়েছে। যেখানে ৭০ হাজার গবাদিপশু পালন করা হবে। ডেইরি ফার্ম থেকে প্রতিদিন ৫০ হাজার লিটার দুধ পাওয়া যাবে। বিফ ফার্ম থেকে প্রতি বছর আনুমানিক ৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি গরুর মাংস উৎপাদিত হবে। কম্পোজিট মিলিটারি ফার্মে একটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে।

 

যেখানে গরু, মহিষ ও ব্ল্যাক বেঙ্গল গোটের সিমন সংগ্রহ করে অন্যান্য মিলিটারি ফার্ম এবং বাংলাদেশের কৃষক ও খামারিদের কাছে কম দামে বিক্রি করার কথা রয়েছে।

 

চর জানাজাতের বাসিন্দা প্রান্তিক চাষি নুরুদ্দিন শেখ জানান, সেনাবাহিনীর খামারে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের ভাগ্য বদল হয়েছে। তিনি জানান, তার ছেলে দীর্ঘদিন বেকার ছিল। পরে সেনাবাহিনীর এই ফার্মে শ্রমিকের চাকরি পেয়েছে। এরপর তাদের ভাগ্য বদলের পালা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া তিনি এই চরে মুদির দোকান করেন। সেনাবাহিনীর খামারের কারণে তার বেচাবিক্রি বেড়েছে।

 

খামারের শ্রমিক শাকিল হাওলাদার জানান, তিনি একসময় বেকার ছিলেন। বর্তমানে সেনাবাহিনীর খামারে চাকরি করছেন। এতে তার পরিবারে আগের মতো অভাব-অনটন নেই। এখন অনেক ভালো আছেন।

 

খামারের সহকারী সুপারভাইজার সুমন মিয়া জানান, খামারটি সাভার মিলিটারি ফার্মের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। খামারে আপাতত শুধু ষাঁড় লালনপালন করা হচ্ছে। উদ্যোগটি লাভজনক হলে আগামীতে এখানে বিশাল পরিসরে গবাদিপশুর খামার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version