খরখড়িয়া নদীর ওপরে সেতু বা ব্রিজ না থাকায় নীলফামারীর সৈয়দপুর বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ১০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের জেলা ও উপজেলা শহরে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সৈয়দপুর পৌর এলাকার মাঝখানে রয়েছে খরখড়িয়া নদী। নদীর পূর্বদিকে বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের তেলিপাড়া, বসুনিয়াপাড়া ও পশ্চিম দিকে দিনাজপুরের বেলাইচন্ডি, দেউলবাঘাছড়া ইউনিয়ন। দুই দিকে প্রায় ১০ গ্রামের ২০ হাজার লোকের বসবাস। দেশ স্বাধীনের প্রায় ৫২ বছরেও সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি কেউ।
তবে বোতলাগাড়ীর ইউনিয়নের স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থী ছাড়াও কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে সৈয়দপুর কিংবা নীলফামারী জেলা শহরে যেতে হয়।
এদিকে, পাঠান পাড়া, প্রামাণিক পাড়া, বালাপাড়া, বড়দহ, জানেরপাড়সহ সৈয়দপুর পৌর এলাকার মানুষ, রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, শিক্ষক, শিক্ষার্থী চলাচল করছে এই সাঁকো দিয়ে।
উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে অফিস আদালত, হাসপাতালসহ নিত্যপণ্য ও ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই পার হয়ে যেতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনেও সেতু নির্মাণ না হওয়ায় স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, কৃষকসহ পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সাঁকো দিয়ে। সাঁকোটি ভেঙে গেলে কলাগাছের ভেলা তৈরি করে পারাপার করেন গ্রামবাসী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোট শেষে সব ভুলে যান। এ ছাড়াও নির্বাচিত মেম্বার, চেয়ারম্যান এমনকি সংসদ সদস্যরাও ভোটের আগে সেতু নির্মাণের কথা বলে ভোট নিলেও ভোটের পরে তাদের আর দেখা মেলে না। তাই অবিলম্বে খরখড়িয়া নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান।
বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের বসুনিয়াপাড়ার বাসিন্দা বাদশা মিয়া বলেন, জেলা ও উপজেলা শহরে যাওয়ার একমাত্র ভরসা খরখড়িয়া নদীর ওপরে বাঁশের সাঁকোটি। এলাকাবাসী নিজস্ব খরচে প্রত্যেক বছরে বর্ষার সময় কাঠ ও বাঁশ দিয়ে সাঁকোটি তৈরি করি। এতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন হাজার হাজার মানুষ। অনেক সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটেছে।
তিনি বলেন, বর্ষার মৌসুমে নদীর স্রোতে সাঁকোটি ভেঙে গেলে তখন আমরা কলাগাছের ভেলা তৈরি করে পারাপার হই। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশুরা কঠিন বিড়ম্বনায় পড়ে যায়। বর্ষার তিন মাসে স্কুলে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
উপজেলার প্রামাণিক পাড়ার বাসিন্দা আশরাফ আলী জানান, ৫০ ফুট দীর্ঘ সাঁকোর ওপর দিয়ে শিশুরা প্রতিদিন স্কুলে যায়। এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি খরখড়িয়া নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণ করে শিক্ষক, স্কুল ও কলেজগামী ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াসহ কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে সুবিধা করে দেয়ার জন্য। এতে কৃষি ও কৃষি পণ্যের মানোন্নয়ন হবে, কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে।
উপজেলার বালাপাড়ার বাসিন্দা আজমল হক বলেন, প্রতিদিন বাঁশের সাঁকো দিয়ে শত শত শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। কিছু দিন আগে এই সাঁকো দিয়ে পার হতে গিয়ে এক ভ্যান চালক ও এক স্কুলছাত্র নদীতে পড়ে গিয়েছিল। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। বিভিন্ন নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দিলেও কোনো ফল পাইনি।
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ব্রিজের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। শুনেছি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন, ব্রিজ নির্মাণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নীলফামারী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফিরোজ হাসান বলেন, বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন একটি জনবহুল এলাকা। আমরা অনেক আগেই ব্রিজের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করি, বর্ষা শেষে দ্রুত ব্রিজ তৈরি করে মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ নিরসন করা হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য