-->
শিরোনাম

অপেক্ষার পালা শেষ পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা থেকে ভাঙ্গায় ট্রেন

ফরিদপুর প্রতিনিধি
অপেক্ষার পালা শেষ
পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা থেকে ভাঙ্গায় ট্রেন
ক্যাপশন: রেললাইন নির্মাণ প্রায় শেষের পথে

অপেক্ষার পালা শেষ। এবার পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যাচ্ছে ট্রেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ঢাকা থেকে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে নিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেনটি যায় ভাঙ্গায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উদ্বোধনের পর শুরু থেকেই এ রেলপথে ঢাকার কমলাপুর, গেন্ডারিয়া, মুন্সীগঞ্জের নিমতলা ও মাওয়া স্টেশন, শরীয়তপুরের পদ্মা স্টেশন, মাদারীপুরের শিবচর এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারবেন। পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার অংশের রেলপথ চলতি মাসে চালুর কথা জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে প্রায় ৮২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন করার কাজ চলছে। তবে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটারের রেললাইন চালু হওয়ার কথা রয়েছে আগামী বছরের জুন মাসে।

 

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, আগামী ১০ অক্টোবর উদ্বোধনের আগে বৃহস্পতিবার কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত নবনির্মিত রেললাইনে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আগামী মাসে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ঢাকার সঙ্গে সংযোগকারী ৮২ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

রেলমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবা দেয়ার জন্য ১০ অক্টোবরকে অস্থায়ী তারিখ ধরে উদ্বোধনের জন্য এগিয়ে যাচ্ছি। উদ্বোধনের তারিখ প্রধানমন্ত্রীর সময়সূচির ওপর নির্ভর করবে।’ বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান বলেন, ‘চীন থেকে আমদানি করা সাতটি নতুন কোচ ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’

 

পদ্মা সেতু হয়ে সাতটি অত্যাধুনিক বগি নিয়ে ফরিদপুরের ভাঙা থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় চলতি বছর ৪ এপ্রিল। আর ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত একটি ট্রাক কার চালিয়ে রেলপথের ট্রায়ালে যায় ১৯ আগস্ট। বৃহত্তর এ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মাওয়া হতে ঢাকার ৪১ কিলোমিটারের এ রেলপথে বিভিন্ন স্থানে ছিল জলাশয়। এর পাশাপাশি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই স্থাপন করা হয়েছে বিশ্বমানের রেললাইন, জানান পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা এএস ফয়সাল। তিনি বলেন, ‘সয়েল টেস্ট করেই আমরা ডিজাইনটা করি। আবার সেই ডিজাইন অনুযায়ী একচুয়াল যে গ্রাউন্ড ছিল, সে অনুযায়ীও কোথাও কোথাও সয়েল ইমপ্রুভমেন্ট করেছি। যেখানে করা যায়নি, সেখানে ধাপে ধাপে মাটি ফেলে একটা লেভেল পর্যন্ত গিয়েছি।’

 

তিনি জানান, এ পদ্মা রেল সেতুর রেলওয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৫ শতাধিক চাইনিজ প্রকৌশলী। একইসঙ্গে বাংলাদেশের স্থানীয় বিভিন্ন ধরনের প্রকৌশলী, সুপারভাইজার, লেবারসহ ৫ হাজারেরও বেশি জনবল এ প্রকল্পে কাজ করছেন। চলতি মাসেই ঢাকা-মাওয়া পর্যন্ত রেললাইনের কাজ সম্পন্ন করা হবে। তবে রেলস্টেশনের কাজ সম্পন্ন হতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। পদ্মা সেতু রেল সংযোগের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ জামিউল ইসলাম বলেন, দেশের বর্তমানে দ্বিতীয় বৃহত্তর প্রজেক্ট, যেটার আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন স্থাপন করা হচ্ছে। আমরা আমাদের গুণগত মান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ সার্বক্ষণিকভাবে সম্পাদন করা হচ্ছে।

 

তিনি জানান, প্রকল্পটির ঢাকা থেকে ভাঙ্গা ‘ফেইজ-১’ এবং ভাঙা থেকে যশোর পর্যন্ত ফেইজ-২। ইতোমধ্যে ফেইজ-১ এর ইতোমধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে একটি ট্রায়াল রানও সম্পন্ন হয়েছে। আর ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। এ প্রকল্পের এ অংশে দেশের দীর্ঘতম রেলওয়ে ভায়াডাক্ট রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ১৭ কিলোমিটার। এটির কাজও সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে এখানে ট্র্যাক নির্মাণের কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখানে যে ট্র্যাক নির্মাণের কাজ চলছে, সেটা অত্যাধুনিক। রেলওয়েতে এই প্রথম এ ধরনের ট্র্যাক ব্যবহার করা হচ্ছে। যে ট্র্যাকগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে, তাতে মেকানিক্যাল সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

এ রেলপথে নিমতলা স্টেশনের কাজও ইতোমধ্যে ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্টেশনগুলো শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার উপযোগী করে ডিজাইন নিশ্চিত করা হচ্ছে।’ দেশের বৃহত্তম এ প্রকল্পে কাজ করতে পেরে খুশি এখানকার শ্রমিকরা। আর প্রকৌশলীরা মনে করছেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে তাদের নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে।

 

নিমতলা স্টেশনের সেফটি ডিপার্টমেন্টের শ্রমিক মো. অনিক বলেন, ‘আমি এত বড় প্রকল্পে যুক্ত হয়ে নিজেকে খুব গর্বিত মনে করি। আমাদের বাংলাদেশের ভেতরে এত বড় বড় মেগা প্রকল্প আছে। এখান থেকে আমরা অনেক কিছু শিখছি। যেটা আমাদের ভবিষ্যতে অন্য দেশে যদি কর্মক্ষেত্রেও যাই আমাদের কাজে লাগবে। আমরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি, যেটি আগে আমরা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি।’

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version