-->
শিরোনাম

শ্রেণিকক্ষ থেকে ফসলের মাঠে শিক্ষার্থীরা

শফিকুল ইসলাম কুদ্দুস, নেত্রকোনা
শ্রেণিকক্ষ থেকে ফসলের মাঠে শিক্ষার্থীরা
ধানক্ষেতের পরিচর্যায় মাঠে শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ থেকে ফসলের মাঠে। যে কচি হাতে বই, খাতা-কলম সেই হাতেই রোপণ ও পরিচর্যা করছে ধানের চারা। ছেলেমেয়ে সব শিক্ষার্থী মিলে শুধু ধান রোপণই নয়, শিখছে রান্না-বান্নাসহ সংসারের অন্য সব কাজ। নতুন পাঠ্যসূচি বাস্তবায়ন করতেই নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক শুরু করেছেন হাতে-কলমে এই কার্যক্রম।

 

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জমি তৈরি থেকে শুরু করে কাদায় নেমে দিনভর করছেন ধানের চারা রোপণ ও পরিচর্যার কাজ। তারা বলছেন, এই শিক্ষা তাদের বাস্তব জীবনে কাজে আসবে শতভাগ।

 

নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক শাকিল আহমেদ হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন পাঠ্যসূচির একটি অধ্যায়। ছেলেমেয়ে শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে কাজ করছেন ফসলের মাঠে। ধান গাছের রোপণের এই দৃশ্য দেখতে আসছেন অভিভাবকসহ এলাকাবাসীও। অভিভাবকদের চোখেও বিষয়টি ভালো লেগেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

 

যত্ন করে জমির আগাছা পরিষ্কার করে জমিতে ধানের চারা রোপণ ও পরিচর্যা করছে শিক্ষার্থীরা। ধানের চারা নিয়ে রোপণ করে। একজন অভিজ্ঞ কৃষকের দিকনির্দেশনায় দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ৩৫ শতক জমিতে ধানের চারা রোপণ করে নজির সৃষ্টি করেছে এই খুদে চাষিরা।

 

ওই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার, মুন্নি আক্তার ও ইমু আক্তার জানায়, বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের নাম, ‘ফসলের ডাক’। ফসল বোনা, পরিচর্যা, সংরক্ষণ, হরিধান ইত্যাদি বিষয়ের উল্লেখ আছে সেখানে। এখন থেকে বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করবে তারা। তাদের সহপাঠী নাফিস ইকবালের বাবাও একজন কৃষক। সে বলে, ‘ভেবেছিলাম, আমি শুধু পড়াশোনা করব। বাবা মাঠে ফসলের কাজ করবেন। নিজে ধান রোপণ করতে গিয়ে সে ভুল ভেঙেছে।’

 

খিলা গ্রামের কৃষক আবুল কাসেম বলেন, কোনো দিন ভাবিনি ছাত্র- ছাত্রীরা ধান লাগানোর কাজ করবে। বিষয়টি খুবই ভালো এবং সুন্দর কাজ। স্কুলে ছেলেমেয়েরা যে কাজটি করেছে তা আমাদের এলাকার মানুষের শিক্ষনীয়। ব্যতিক্রমী এই কাজের নেপথ্যে ছিলেন খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক শাকিল আহমেদ। শিক্ষার্থীদের শাকিল আহমেদ আগের দিনই বলে রেখেছিলেন এক ‘অতিথি শিক্ষক’ আসার কথা।

 

কৃষক হারিছকে সামনে পেয়ে শিক্ষার্থীরা একের পর এক প্রশ্ন ছুড়তে লাগল। প্রথম দিকে জড়তা থাকলেও ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে ওঠেন অতিথি শিক্ষক কৃষক হারিছ। অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে নিজের মতো করে শিক্ষার্থীদের কৌতূহল মেটানোর চেষ্টা করলেন।

 

শিক্ষক শাকিল আহমেদ জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই একজন শিক্ষার্থী যদি জানে জমিতে ফসল বোনা, পরিচর্যা ও সংরক্ষণ কীভাবে করতে হয় তাহলে এটা তাকে আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করবে। এ কাজে জড়িত হয়ে সে কখনো কৃষি পেশাকে ছোট করে দেখবে না। নিজের কাজ নিজে করে আনন্দও পাবে। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে হাতে-কলমে কাজ শিখলে তা জীবনভর কাজে লাগে। এ জন্যই তাদের মাঠে কাজ করতে নেয়া হয়েছে।

 

মাঠে শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেয়া ওই কৃষি জমিটির মালিক কৃষক হারিজ উদ্দিন বললেন, ‘এই ছেলেমেয়েরা আমার কয়েক হাজার টাকা বাঁচিয়ে দিয়েছে। এরা কৃষি কাজ করতে পারবে কোনো সময় ভাবতে পারিনি।’

 

খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খায়রুল আলম বলেন, ‘এই কাজের মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, তা পারিবারিক কাজকর্মে প্রয়োগ করলে পরিবার খুব উপকৃত হবে। এই বয়সি অনেক ছেলেমেয়ে আজকাল অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারসহ নানা বাজে অভ্যাসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। কেউ কেউ দলবদ্ধ হয়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জড়াচ্ছে। এসব থেকে সমাজকে রক্ষা করতে এ ধরনের কার্যক্রমের বিকল্প নেই।’

 

নেত্রকোনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল গফুর বলেন, ‘খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো যদি প্রতিটি স্কুল শিক্ষার্থীদের এভাবে কাজ শেখায় তাহলে শিক্ষার্থীরা স্বনির্ভর হবে। আগামী দিনে দেশও এগিয়ে যাবে। ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণিতে এ ধরনের নতুন কারিকুলাম যুক্ত করা হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version