-->
শিরোনাম

যে হাত তালি দিত, সেই হাতই এখন কর্মক্ষম

বাবলুর রহমান বারী, রংপুর ব্যুরো
যে হাত তালি দিত, সেই হাতই এখন কর্মক্ষম
হাতের কাজে ব্যস্ত তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী

যে তালি দিয়ে হাটে-বাজারে বিভিন্ন পরিবহনে টাকা আদায় করত, আজ সেই হাতই কর্মক্ষম। তৃতীয় লিঙ্গের সুবর্ণা, শশী ও সানিরা। এক সময় তারা কয়েকজন প্রতিদিন রঙিলা সাজে বের হতেন। দলবদ্ধ হয়ে ঘুরে ঘুরে চাঁদা তুলতেন। কখনো শহরের রাস্তাঘাট, পাড়া-মহল্লায়, এমনকি বিয়েবাড়িতেও দেখা যেত তাদের। আবার কখনোবা বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়াতে স্টেশনে।

 

এসব স্থানে সপ্তাহের যেকোনো এক দিন দেখা মিলত সুবর্ণাদের। দলের সঙ্গে থেকে হাততালি দিয়ে অন্যের কাছে টাকা-পয়সা চাওয়া, না পেলে গালাগালি, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, হেয় করে অপদস্থ করে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করা, নয়তো তর্কে জড়ানো ছিল তাদের একমাত্র নিত্যদিনের ঘটনা।

 

কিন্তু এখন সুবর্ণা, শশী ও সানিরা আর আগের সেই অবস্থানে নেই। রঙিলা সাজ আর হাততালি দিয়ে তাদের চাইতে হয় না চাঁদা। কুটিরশিল্পের কাজে জড়িয়ে তাদের অনেকেই এখন কর্মক্ষম। নিজের মুখের অন্ন জোগাচ্ছেন নিজ হাতেই। নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের দেখভাল করছেন অনায়াসেই। অভিমান ভুলে নিজের পরিবারে ফিরে গিয়ে কেউ কেউ ধরেছেন সংসারের হাল। সুবর্ণা, শশী, সীমার মতো প্রশিক্ষণ পাওয়া বাবু, রুবেল, রুমা, অপু, দোলা, সজলও এখন একই স্বপ্ন দেখছেন।

 

রংপুরে প্রায় তৃতীয় লিঙ্গের ৪০০ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪০-৫০ জন রংপুরের নগরের নূরপুর জেএনসি রোডে (ছড়ারপাড়া) একটি পুরোনো, স্যাঁতসেঁতে ও জরাজীর্ণ বাড়িতে ভাড়া রয়েছেন। তারা সেখানে তিনটা রুমে গাদাগাদি করে থাকেন। অবহেলিত সমাজের এই জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে লক্ষ্যে ২০০৯ সালে ‘ন্যায্য অধিকার হিজড়া উন্নয়ন সংস্থা’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন আনোয়ারা ইসলাম রানী।

 

এই সংগঠনের মাধ্যমে রংপুর নগরীর নজরুল চত্বর এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন হস্ত ও কুটিরশিল্পের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা কারখানা। সেখানে তাদের জন্য কম্পিউটার, বিউটিপার্লার, দর্জি ও রান্নাবান্নার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু কাজ করার জায়গা ও পরিবেশ না পাওয়ার কারণে পিছিয়ে পড়েছে অবহেলিত এই তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী।

 

বর্তমানে প্রশিক্ষণ শেষে শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, ফুলদানি, মাটির কার্টেল, কয়েলদানি, কলমদানিতে নকশাসহ বিভিন্ন ধরনের শোপিস তৈরির প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজ করা শিখছেন তারা। এসব কাজে তাদের দৈনিক আয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এই আয় থেকে নিজেরা চলতে পারছেন অন্যদিকে তাদের উৎপাদিত এসব হস্তশিল্প ক্রয় করছে রূপায়ণ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

 

সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসাবমতে, দেশে প্রকৃত তৃতীয় লিঙ্গের সংখ্যা ১২ হাজার। তবে এই জনগোষ্ঠীর দাবি, দেশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সংখ্যা দেড় থেকে দুই লাখ। সমাজসেবা অধিদপ্তর ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে তাদের জীবনমান উন্নয়নে কর্মসূচি চালু করে।

 

এ বিষয়ে রংপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালায়ের উপপরিচালক আব্দুল মতিন জানান, জেলার তালিকাভুক্ত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মধ্য থেকে বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তাদের অনেকে ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তি পাচ্ছেন।

 

রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আনোয়ারাদের কার্যক্রম দেখেছি ভালো লেগেছে। তারা নিজেদের বদলাতে চান। হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলছেন। তৃতীয় লিঙ্গের সবার উচিত তাদের অনুসরণ করা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version