-->
শিরোনাম

বর্জ্যদূষণ ও অপরিকল্পিত নগরায়ণে নাকাল কক্সবাজার

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
বর্জ্যদূষণ ও অপরিকল্পিত নগরায়ণে নাকাল কক্সবাজার
ক্যাপশন: অপরিকল্পিত নগরায়ণের শিকার কক্সবাজার

স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট না থাকায় কক্সবাজারে ৫ শতাধিক হোটেল মোটেল-গেস্টহাউস রেস্ট হাউসসহ, সাড়ে ৪ হাজার আবাসিক হোটেল, বসতবাড়ি ও হ্যাচারি থেকে প্রতি বছর নির্গত ২৫০ টন বর্জ্য সাগরে মিশে যাচ্ছে। এতে সাগরের পানি দূষিত হচ্ছে ও পরিবেশের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। সাগরে প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

 

দূষণের মাত্রা আরো বাড়তে থাকলে পানিতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে ভবিষ্যতে কক্সবাজার বিমুখ হবে পর্যটক এমনটা মনে করেন আধুনিক কক্সবাজারের রূপকার সাবেক কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ। এখনই এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা নাহলে পর্যটন শিল্প নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। পরিকল্পিত নগরায়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা না গেলে এ শিল্পের সাথে জড়িত কয়েক লাখ লোক বেকার হয়ে পড়তে পারে বলে আশংকা ব্যক্ত করেন পৌর মেয়র মাহবুবর রহমান চৌধুরী। এ অবস্থায় সাগরের পানি দূষণমুক্ত রাখতে কক্সবাজারে একটি সেন্ট্রাল এসটিপি স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বর্তমান চেয়ারম্যান কমোডর নুরুল আবছার বলছেন এসটিপি নিয়ে কাজ করছেন তারা।

 

তথ্য মতে, কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোন এলাকায় ৫ শতাধিক বাণিজ্যিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস রেস্ট হাউস রয়েছে। রয়েছে ৭ শতাধিক রেস্তোরাঁও। কিন্তু শুধু ৬টি হোটেলে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) রয়েছে। আর কোনো আবাসিক হোটেলে এসটিপি নেই। এ ছাড়া শহরে নির্মিত কোনো আবাসিক ভবনেও নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ফলে তাদের তৈরি বর্জ্য যাচ্ছে সাগরে। বিশেষ করে বর্ষাকালে মানব বর্জ্য ফেলা হয় সাগরে। সাথে যুক্ত হচ্ছে পাহাড় কাটার বালিও। এতে সাগরের তলদেশ ভরাট হচ্ছে। মানব সৃষ্ট বর্জ্য সাগরের পানি দূষিত হলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তর। এ অবস্থায় একটি সেন্ট্রাল এসটিপি স্থাপনের দাবি আরো জোরালো হয়ে ওঠে।

 

সম্প্রতি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে ১৩৪টি হোটেল-মোটেল/গেস্ট হাউস/কটেজকে ‘এসটিপি’ স্থাপন সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। মাত্র ৬টি হোটেল এসটিপি রয়েছে বলে চিঠির উত্তরে বলা হয়। আর ৩৯টিতে ৩ চেম্বারবিশিষ্ট সেপটিক ট্যাংক রয়েছে বলে জানানো হলেও বাকি ৮৯টি হোটেলে চিঠির কোনো উত্তর দেয়নি। এ অবস্থায় সেন্ট্রাল এসটিপি বসানো নিয়ে পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস এবং হ্যাচারি মালিকদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছে কউক। সভায় কউকের প্রকৌশলী খিজির খান জানান, প্রতিবছর ২৫০ টন বর্জ্য সাগরে মিশছে। এভাবে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ চলতে থাকলে বাস যোগ্যতা হারাবে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত নগরী কক্সবাজার।

 

বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার এবং এনভায়রনমেন্টাল ওশানোগ্রাফি ও ক্লাইমেট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আবু শরীফ মো. মাহবুব-ই-কিবরিয়া বলেন, সেন্টমার্টিনে পয়ঃবর্জ্যরে কারণে ‘ই-কোলাই’ ব্যাকটোরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কক্সবাজারে এর প্রভাব আরো বেশি পড়তে পারে। এতে চর্মরোগ ও আমাশয় রোগের প্রভাব দেখা দিতে পারে। এছাড়া প্লাস্টিক, জেলেদের জাল, পোড়া তেল, সেন্ডেলসহ অন্যান্য বর্জ্যরে কারণে সাগরের পানি বিষাক্ত হয়ে প্রাণী জগতের ক্ষতি হতে পারে।

 

ওয়াটার্স কিপার বাংলাদেশ সেপটারের প্রধান নির্বাহী শরীফ জামিল বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে কক্সবাজার ঘুরতে আসে পর্যটকরা। যদি তারা দেখে সাগরের পানি নোংরা তাহলে ক্রমাগতভাবে কক্সবাজার বিমুখ হবে পর্যটকরা। কেউ একবার এসে কক্সবাজারের পরিবেশ দূষণের ভয়াবহ চিত্র দেখে গেলে আর কক্সবাজার আসবে না। এতে ক্ষতির মুখে পড়বে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। বেকার হবে এ শিল্প ব্যবসার সাথে জড়িতরা। বিষয়টি ব্যবসায়ীদের বুঝতে হবে।

 

হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, হোটেল/গেস্ট হাউসগুলো মাত্র ৪-৫ কাঠা জমির ওপর নির্মিত। এসব হোটেল ভেঙে এসটিপি বসানোর সুযোগ নেই। এ অবস্থায় একটি সেন্ট্রাল স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলে হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হবে। সেন্ট্রাল এসটিপি বসানোর উদ্যোগ নিলে ব্যবসায়ীরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন এমনটা জানিয়েছেন কলাতলীস্থ হোটেল জোনের সভাপতি সমিতির সভাপতি মুকিম খাঁন।

 

পর্যটন করপোরেশন কক্সবাজার ইউনিট ম্যানেজার মো. রায়হান উদ্দিন বলেন, এসটিপি নিয়ে জেলা প্রশাসনের আলোচনা সভায় আমরা কথা বলেছি। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জমি পাওয়া গেলে কাজ শুরু করা হবে।

 

বীচ মেনেজম্যান্ট কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান বলেন, কক্সবাজারে কয়েকটি হোটেল ছাড়া আর কোনো হোটেলে এসটিপি নেই। বিষয়টি দুঃখজনক। এসটিপির গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এটিকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে আমরা এসটিপির সম্ভাব্যতাও যাচাই করেছি। আশা করছি, সবার সহযোগিতায় দ্রুতই একটি সেন্ট্রাল এসটিপি বাস্তবায়ন করা যাবে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version