টানেলে প্রবেশের আগে গাড়িতে এফএম রেডিও চালু করলেই চলতে থাকবে টানেল ব্যবহারের নীতিমালা। টানেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এটি চলতে থাকবে।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মনজুর হোসেন।চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহু প্রতীক্ষার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে এ প্রস্তুতি সভা অুনষ্ঠিত হয়।
সভায় সচিব বলেন, ‘টানেলে ঢুকার আগে যেসব গাড়ি এফএম রেডিও চালু করবে তখন টানেল ব্যবহারের নীতিমালা অটোমেটিক চলতে থাকবে। অধিকাংশ রেডিও স্টেশনে এই নীতিমালা রয়েছে। টানেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রেডিওতে এই নীতিমালাগুলো পড়ে শুনানো হবে।’
সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, ‘ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের টানেলের কাজ সমাপ্তি করার কথা থাকলেও তার আগেই কাজ শেষ করেছি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। দিনশেষে আমরা সবাই কাজ করছি দেশের জন্য, জাতির জন্য। সবাই মিলে কাজ করলে কোনো সমস্যা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৯ অক্টোবরের আগে টানেলে সাধারণ মানুষ কেউ যেতে পারবে না। ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধনের করার পরদিন ২৯ অক্টোবর সকাল ১০টার পর টানেল সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে।’
সভা শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মনজুর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেল শুধু চট্টগ্রামবাসীর জন্য গর্ব নয়, জাতির জন্যও একটা গর্বের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা এই যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেল এখন প্রায় প্রস্তুত হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী এটা উদ্বোধন করার জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছেন। ইতোমধ্যে সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’
‘এটার প্রি-কমিশনিং থেকে শুরু করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা যেগুলো সেগুলো দেখা হয়েছে। আশা করছি ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধন করার পরদিন থেকে সাধারণ মানুষের যে আকাঙ্খা, টানেলের নিচ দিয়ে যাওয়ার যে স্বপ্ন রয়েছে তা যেতে পারবে।
টানেল উদ্বোধনের পরও কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে ফাঁড়ি, ডাম্পিং, স্টেশনের কথা বলা হয়েছে, সেটা করতে পারব, জায়গা রয়েছে। অপারেশনের যারা রয়েছেন, মেইটেনেন্স যারা করবেন তাদের নিজস্ব যানবাহন থাকবে। প্রথমদিকে অন্যদের সাপোর্ট নিয়ে সবার সমন্বয়ে কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।’
টানেল চালু হলে ট্রাফিক জট হতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সেতু সচিব বলেন, ‘ট্রাফিকের প্ল্যান আছে, পুলিশেরও নির্দিষ্ট প্ল্যান থাকতে পারে। সিডিএর পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব আছে। তারাও কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। টানেলের আরও একটি বড় লক্ষ্য রয়েছে কক্সবাজারে কিছু বড় প্রকল্প হচ্ছে। আগামী দুই চার বছরের মধ্যে সেই প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য টানেলটি ব্যবহার করা হবে। সেক্ষেত্রে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পুলিশের আলাদা প্ল্যান আছে, পরিকল্পনাও আছে। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা সব কাজ করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘ওয়ান সিটি টু টাউনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পতেঙ্গার এক পাশে আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। আরও করা হচ্ছে। আনোয়ারা প্রান্তে পৌনে দুই বছর যাবৎ দেখছি, অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চোখের সামনে সেই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। নগরীকে যদি আনোয়ারার ওই প্রান্তে শিফট করা যায় তাহলে এদিকে চাপ কমবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানা গড়ে উঠা; এগুলোই তো মূল লক্ষ্য। একটি দেশের উন্নয়নে জিডিপিতে পজিটিভ প্রভাব যেটা থাকে সেটা হচ্ছে, আমরা সময় বাঁচাতে পারছি কি না, আমরা শিল্প উন্নয়ন ঘটাতে পারছি কি না, ট্যুরিজমে ডেভলপ ঘটাতে পারছি কি না। সব কিছু মিলিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে উন্নয়নটা দেখা যাচ্ছে। সেটাই মূল বিষয়। ওয়ান সিটি টাউনের কনসেপ্টটা সেখান থেকেই এসেছে।’
‘কোন কোন যানবাহন টানেলে চলবে তা নির্ধারিত করা হয়েছে। টোলও নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। যে ডিজাইন করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার বেগে প্রতি ঘণ্টায় গাড়ি চলতে পারবে। টানেলের কনসেপ্টটা আমাদের কাছে নতুন। সেজন্য এটার কিছু চ্যালেঞ্জ রেয়েছে। ভেতরে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে সেজন্য রেসকিউ কিভাবে হবে? সেটা অন্য ব্রিজ বা সড়ক থেকে আলাদা।
সেক্ষেত্রে আমাদের এই জিনিসটা নিশ্চিত করতে হচ্ছে টানেলও নিরাপদ থাকবে এবং যারা ব্যবহার করবে তারাও নিরাপদ থাকবে। সেই ধারণা থেকে এই মুহূর্তে দুই বা তিন চাকার গাড়ির জন্য এটা নিরাপদ হবে না বলে আমি মনে করি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘ট্যাক্সি ক্যাবটা যে কেউ চালু করতে পারেন। সেজন্য সেতু বিভাগ থেকে আলাদাভাবে প্রকল্প নেওয়ার দরকার নেই। জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিতে পারে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকয়েক মাস ধরে টানেলে ট্রায়াল হচ্ছে। ইলেকট্রিক মেকানিক্যাল কাজ হয়ে যাওয়ার পর প্রি-কমিশনিং, সেফটি এসবই ট্রায়ালের অংশ।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, ডিআইজি নুরে আলম মিনা, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুন উর রশিদ ও আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য