-->
শিরোনাম

ব্রিজ নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা, ভোগান্তিতে লাখো বাসিন্দা

বরগুনা প্রতিনিধি
ব্রিজ নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা, ভোগান্তিতে লাখো বাসিন্দা
নড়বড়ে কাঠের সিঁড়ি দিয়ে পার হচ্ছে স্থানীয়রা

নির্মাণের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল এক বছর। দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়ে তিন বছরে মূল ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে এখনো হয়নি সংযোগ সড়ক (এপ্রোচ)। উভয় প্রান্তে নড়বড়ে কাঠের সিঁড়ি দিয়ে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেই সিঁড়ি ব্যবহার করতে গিয়ে এখনো পর্যন্ত চারজন পথচারী আহত হয়েছেন।

 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই ব্রিজটি নির্মাণকাজে দীর্ঘসূত্রতায় ঠিকাদারের খেয়ালখুশি আর তদারকি কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে তিন বছর ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছে ওই ব্রিজ ব্যবহার করা তিনটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক বাসিন্দা।

 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বরগুনা কার্যালয়ের তথ্যমতে, বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের কেওড়াবুনিয়া বাজার সংলগ্ন খাকদোন নদের ওপর ৩০.৪ মিটার দৈর্ঘ্য ব্রিজ নির্মাণে তিন কোটি ৮৯ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭ টাকা ব্যয় ধরা হয়।

 

২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাজী এন্টারপ্রাইজকে ব্রিজ নির্মাণের কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। কার্যাদেশ অনুসারে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিলের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্রিজ নির্মাণ শেষ করা কথা। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে নির্মাণ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কাজ শেষ হবার মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হলেও ঠিকাদার ব্রিজের কাজ শেষ করতে পারেনি।

 

৩য় দফায় আবারো কাজ শেষ হওয়ার মেয়াদ বাড়িয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয় এলজিইডি। সোমবার দুপুরে ব্রিজটি সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ব্রিজের কাজ শেষে উভয় প্রান্তে সড়কের সাথে কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ব্রিজ পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু কাঠের সিড়ি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে নারী বৃদ্ধ ও শিশুদের চলাচলের অনুপযোগী।

 

ঝুঁকি নিয়ে কাঠের সিড়ি পার হতে গিয়ে এ পর্যন্ত নারী শিশুসহ চারজন ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের মধ্যে কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের সিংড়াবুনিয়া গ্রামের আবদুর রশীদের স্ত্রী আলেয়া বেগম গত শুক্রবার সিঁড়ি পার হওয়ার সময় পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়ে এখন বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

 

কেওড়াবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী, ঘটবাড়িয়া কলেজ, গুদিঘাটা আলিম মাদ্রাসাসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের চলাচলের জন্য এই ব্রিজ ব্যবহার করতে হয়।

 

গুদিঘাটা মাদ্রাসার আলিম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. জাবের মিয়া বলেন, পুরনো ব্রিজটি ভাঙার পর পাশে কাঠের সাঁকো দিয়ে দেয়া হয়েছি। তিন বছরে সেটি পুরোনো হয়ে ভেঙে খালে নিমজ্জিত। এখন ব্রিজের কাজ শেষ হলেও পারাপারের জন্য যে কাঠের সিঁড়ি দেয়া হয়েছে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকি মেনেই আমাদের মাদ্রাসায় যেতে হয়।

 

আয়লা এলাকার বাসিন্দা হারুন অর রশিদ বলেন, আমাদের আয়লা, চান্দখালি, কেওড়াবুনিয়া এই তিন এলাকার বাসিন্দাদের জেলা সদরে যাতায়াতে এই ব্রিজটি ব্যবহার করতে হয়।

 

তিন বছর ধরে আমরা ভোগান্তি পোহানোর পর ব্রিজের কাজ শেষে এখনো আমাদের সিঁড়ি পার হতে হয়। এটা খুবই দুঃখজনক যে, এ সিঁড়ি দিয়ে ব্রিজে উঠতে গিয়ে অনেকে আহত হওয়ার পরও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।

 

আবদুর রহমান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘ঠিকাদার যাচ্ছেতাই কাজ করেছে। আমরা কিছু বলতে গেলে মামলা দেয়ার হুমকি দিয়েছে। এখানে তো আসলে এমন কেউ নেই আমাদের দুঃখ বুঝবে। আমরা ব্রিজের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই।

 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাজী এন্টারপ্রাইজের নামের কার্যাদেশ দেয়া হলেও ওই লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজ করছেন সগীর হোসেন নামের একজন ঠিকাদার। তার সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, নানা সমস্যায় কাজটি বেঁধে দেয়া সময়ে করা সম্ভব হয়নি। মেয়াদ শেষ হবার আগেই সংযোগ সড়ক নির্মাণ শেষ করা হবে।

 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ বরগুনা কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে ব্রিজটি ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সবশেষ বেঁধে দেয়া সময়সীমা এ বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়েই মধ্যে ঠিকাদার ব্রিজের কাজ শেষ না করলে তার বিল আটকে দেয়া হবে। আশা করি এই সময়ের মধ্যে ব্রিজের বাকি কাজ শেষ হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version