টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কচুরিপানার দখলে থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। প্রতি বর্ষায় ওই শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা নৌকায় বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করলেও চারদিকে কচুরিপানা এসে জড়ো হওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশ কচুরিপানার দখলে রয়েছে। এবারের বর্ষায় যখন পানি বাড়ে তখন বিদ্যালয়েও পানি উঠেছিল। সম্প্রতি মেঝে থেকে পানি নেমে গেলেও বিদ্যালয়ের চারপাশে কচুরিপানা থাকায় শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হতে পারছেন না। শিক্ষকরা বিদ্যালয়টি খোলা রাখলেও সব ধরনের পাঠদান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। নিচু এলাকা ও খোলা জায়গায় ভবন থাকায় প্রতিবছর বর্ষাকালে নৌকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার তন্নি, প্রসেনজিৎ সরকার, নাজমুল হাসানসহ অনেকেই জানান, বর্ষা হলে স্কুলের চারপাশে পানি ওঠে তারা পড়াশোনা করতে পারে না। কয়েকদিন আগেও বিদ্যালয়ে পানি উঠায় পাঠদান বন্ধ ছিল। বিদ্যালয়ের চারপাশ কচুরিপানায় (স্থানীয় ভাষায় টাগই) ভরে গেছে। বর্তমানে স্কুল খোলা থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে আসতে পারে না। শিক্ষকরা চাকরি রক্ষায় অতি কষ্টে নৌকা নিয়ে বিদ্যালয়ে আসার সময় তাদের সাথে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসেন।
তারা জানান, উপজেলার অন্যান্য স্কুল খোলা এবং নিয়মিত পাঠদান চলছে। কিন্তু চারপাশে কচুরিপানার কারণে তাদের স্কুল কার্যত বন্ধ। তারা পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়ছেন।
রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা আক্তার পপি জানান, তিনি ২০১৮ সালে এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তিনি নতুন ভবন ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র আনার জন্য চেষ্টা করছেন। বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের নিচে খোলা থাকবে আর উপরে পাঠদান চলবে। গত বছরও তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন।
২০২১ সালে যখন বড় বন্যা হয়। তখন ছবিসহ আবেদন করেছেন কর্তৃপক্ষ, এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ বছরও তিনি বিদ্যালয়ের ছবি তুলে কর্মকর্তাদের ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়েছেন। ওনারা যদি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে তিনি কী করতে পারেন?
তিনি জানান, বিদ্যালয়ের চারপাশে কচুরিপানা রয়েছে। বিদ্যালয়ের মেঝেতে এক ফুট উঁচুতে পানি ছিল। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার তিনটি পরীক্ষা বিদ্যালয়ে নিতে পারলেও অন্য তিনটি পরীক্ষা রাশড়া করিম বাজার গ্লোবাল কিন্ডার গার্টেনের টিনসেড ঘরে নিতে হয়েছে। তিনটি পরীক্ষা নেয়ার পর বিদ্যালয়ের মেঝেতে পানি চলে আসে। পানি মেঝে থেকে নেমে গেলেও বিদ্যালয়ের চারপাশে এখনো কচুরিপানা রয়েছে। সামনের সপ্তাহ থেকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালু করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি জনতে পেরেছেন, নতুন ভবনের তালিকায় এ বিদ্যালয় ২৭ নম্বর অবস্থানে। অথচ উঁচু ভবনের অভাবে এ বিদ্যালয়ে বর্ষায় পাঠদান বন্ধ রাখতে হয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের মিয়া জানান, তিনি দুই বছর ধরে শুনছেন-বিদ্যালয়টির নতুন ভবন করা হবে। এখনো কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এই এলাকাটি নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বর্ষাকাল এলে মাঠ ও মেঝেতে পানি ওঠে। তখন শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হয়। বিদ্যালয়ের মেঝে থেকে পানি নেমে গেছে। বিদ্যালয়ের চারপাশে কচুরিপানা রয়েছে। কচুরিপানাগুলো সরিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নৌকায় হলেও বিদ্যালয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হবে।
বাসাইল উপজেলা শিক্ষা অফিসার আনজুম আরা বেগম বীথি জানান, তিনি ওই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছেন। তিনি জানতে পেরেছেন ওই বিদ্যালয়টিতে প্রতি বছর পানি ওঠে। ইতোমধ্যে রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। শুধু রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, এ উপজেলার আরো কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে পানি ওঠে।
এ বিদ্যালয়গুলো বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র কাম স্কুল ভবন নির্মাণ করা দরকার ছিল।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য