-->
শিরোনাম

সাড়া জাগিয়েছে আলতাফের তান্দুরী চা

নিত্যানন্দ হালদার, মাদারীপুর
সাড়া জাগিয়েছে আলতাফের তান্দুরী চা
মাদারীপুরের আলতাফ তান্দুরী চা ঘর

ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শিক্ষা নিয়ে যে, ভাগ্য বদলের সহায়ক হতে পারে তারই এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মাদারীপুরের মো. আলতাফ মাহমুদ নামের এক তরুন চা বিক্রেতা।

 

এ তান্দুরী চা ধীরে ধীরে স্থানীয় ঐতিহ্যে রূপ নিচ্ছে। মাদারীপুরের প্রত্যন্ত এলাকার চা বিক্রেতা আলতাফের ইউটিউব দেখে শেখা সুস্বাদু তান্দুরী চা পান করতে মাদারীপুরের বিভিন্ন উপজেলা, পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর, ফরিদপুরের ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের দত্তেরহাট গ্রামের তরুণ মো. আলতাফ মাহমুদ ফকির। আর্থিক সংকটে লেখাপড়া খুব বেশি করা হয়নি। পরিবারের চাহিদা মেটাতে পার্শ্ববর্তী পেয়ারপুর ইউনিয়নের পেয়ারপুর বাজারে বাবা তোফাজ্জেল ফকিরের ছোট্ট চায়ের দোকানেই ভাগ্য বদলের হাতেখড়ি নেন। কিন্তু বাজারের অসংখ্য চায়ের দোকানের মাঝে ছোট্ট একটি দোকানে শুধুমাত্র চা বিক্রি করে স্বচ্ছলতা ফিরছিল না আলতাফ মাহমুদের পরিবারে। এরপর তিনি ইউটিউবে ভারতের ঐতিহ্যবাহী তান্দুরী চা তৈরির রেসিপি দেখে রপ্ত করেন।

 

প্রায় ২ বছর আগে সেই ছোট্ট চায়ের দোকানেই শুরু করেন তান্দুরী চা তৈরি। গরম পানি, চায়ের লিকার, চিনি, গুড়ো দুধ, তরল দুধ, গরুর দুধের সর, কাজুবাদামের গুড়ো, কালোজিরা, থ্রি ইন ওয়ান চা, ওভালটিন, টেরাবিকা, চকলেটের গুড়ো, চকলেট সিরাপসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে চা তৈরি করেন আলতাফ। গরম চা মাটির তৈরি ছোট্ট হাঁড়িতে ঢেলে চা পিপাসুদের পরিবেশন করেন তিনি।

 

পোড়া মাটির গন্ধে ভরপুর এই সুস্বাদু চা পান করতে আলতাফ মাহমুদের দোকানে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চা পিপাসুদের লাইন লেগেই থাকে। প্রতিদিনই মাদারীপুরের বিভিন্ন উপজেলা, পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর, ফরিদপুরের ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ প্রত্যন্ত এলাকা পেয়াপুর বাজারে ছুটে আসে আলতাফের তান্দুরী চা ঘরে তান্দুরী চা পান করতে।

 

আলতাফ তান্দুরী চায়ের দোকানে শুধু তান্দুরী চাই তৈরি করেন না, তার চায়ের দোকানে আরো নানা ধরণের চা পাওয়া যায়। ‘চায়ের সঙ্গে কাপ চিবিয়ে খাবেন’ এই শিরোনামে চকলেট চা বিস্কুট কাপ ৫০ টাকা, চকলেট কপি বিস্কুট কাপ ৬০ টাকা, মাটির কাপে করে তান্দুরী চা ৩০ টাকা, তান্দুরী চকলেট চা ৫০ টাকা, কফি তান্দুরী চা ৫০ টাকা, পেপার কাপে দুধ চা ১০ টাকা, মালাই চা ২০ টাকা, কফি রেগুলার ৩০ টাকা ও গ্রিন চা ১০ টাকা করে বিক্রি করেন।

 

প্রতিদিন ৩-৪শ কাপ চা বিক্রি করেন আলতাফ। আগে যেখানে প্রতিদিন ৪-৫শ টাকার চা বিক্রি করতেই হিমশিম খেতে হতো, সেখানে এখন প্রতিদিন ৮-৯ হাজার টাকার তান্দুরী চা বিক্রি করেন আলতাফ। শুক্রবারসহ ছুটির দিনে ১০-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় বলে আলতাফ জানান। ইউটিউব থেকে শেখা এই তান্দুরী চাই ভাগ্যবদল করেছে আলতাফ মাহমুদের। বর্তমানে পরিবারের সদস্যদেও নিয়ে সুখেই রয়েছেন তিনি।

 

চা পান করতে আগতরা বিমোহিত আলতাফের তান্দুরী চায়ে বাজিতপুর ইউনিয়নের চৌরাশী গ্রামের কেশব রায় বলেন, এখানে অনেকেই চা খেতে আসেন। বিশেষ করে তান্দুরী চায়ের স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। তাই আমি প্রায় আসি এখানে এই চা খেতে।

 

শহরের ১নং শকুনি এলাকা থেকে আসা তানমিরা বলেন, যখন ইচ্ছে হয়, তখন স্বামীর মোটরসাইকেলে করে এতদুরে এসে তান্দুরী চা খাই। এই চায়ের খুব নাম আছে, তাই সুযোগ পেলেই পরিবারসহ এখানে চলে আসি।

 

আয়ান হাসান নামের ৯ বছরের এক শিশু বলেন, আমি মায়ের সঙ্গে প্রায় আসি এখানে চা খেতে। তান্দুরী চায়ের মধ্যে চকলেট থাকে, তাই খেতে আমার খুব ভালো লাগে।

 

স্থানীয় গাজিরচর গ্রামের বাসিন্দা ও চরমুগরিয়া কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. নিজামউদ্দিন হাওলাদার বলেন, আলতাফের চা মানেই মজা। অনেক দুর থেকে এখানে চা খেতে মানুষজন আসেন। তাছাড়া আমাদের গ্রাম ও আশপাশের গ্রামে নতুন কেউ বেড়াতে এলে আলতাফের চা না খেয়ে যায় না। আলতাফের চা এর দোকানের জন্যই এই বাজারটা জমে আছে।

 

চা বিক্রেতা আলতাফ মাহমুদ বলেন, আমি ইউটিউব দেখে এই চা বানানো শিখে মাটির কাপে করে তান্দুরী চা বিক্রি শুরু করেছি। প্রথম দিকে আমি একা তান্দুরী চা বানালেও বর্তমানে অনেকেই এই চা বানিয়ে তা বিক্রি করে বেকারত্ব দুর করেছেন। আর্থিক সংকটে লেখাপড়া খুব বেশি করা হয়নি। পরিবারের চাহিদা মেটাতে বাড়ির পার্শ্ববর্তী পেয়ারপুর ইউনিয়নের পেয়ারপুর বাজারে বাবার ছোট্ট চায়ের দোকানেই আজ আমার ভাগ্য বদল হয়েছে। শুধুমাত্র চা বিক্রি করে পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে পারব, তা কখনো ভাবিনি।

 

পেয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাবলু হাওলাদার বলেন, আমাদের পেয়ারপুর বাজারের আলতাফ তান্দুরী চা ঘরের এই অসাধারণ স্বাদের তান্দুরী চা প্রশংসার দাবিদার। আমাদের এই পেয়ারপুরবাজারটি তন্দুরী চাকে কেন্দ্র করে জমজমাট। আলতাফ তার তান্দুরী চায়ের মাধ্যমে ভাগ্যের পরিবর্তন এনেছে।

 

সামাজিক মাধ্যম যে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যম হতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত চা বিক্রেতা আলতাফ। তাই সামাজিক মাধ্যমকে কাজে লাগানো এখন সময়ের দাবি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version