-->
শিরোনাম

শীতলপাটি চাহিদা কমলেও হাল ছাড়েননি কারিগররা

মীর বাবুল, ময়মনসিংহ
শীতলপাটি চাহিদা কমলেও হাল ছাড়েননি কারিগররা
হালুয়াঘাটের দাসপাড়া গ্রামে শীতলপাটি তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের দাসপাড়া গ্রামে শীতলপাটি তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা। হালুয়াঘাটের শীতলপাটি চাহিদা কমলেও হাল ছাড়েননি কারিগররা। শীতলপাটির নাম শুনলেই যেন দেহে শীতল অনুভূতি তৈরি হয়। নিপুণ হাতে নারীরা বোনেন শীতলপাটি। নানা নকশার এ পাটির কদর দেশজুড়ে। ২ দশক আগেও গ্রীষ্মকালে গ্রামের ঘরে ঘরে এর অনেক ব্যবহার ছিল। শীতলপাটির বিছানায় সুখ খুঁজতেন মানুষ।

 

কালক্রমে এর কদর কমলেও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে শতাধিক পরিবার এখনো এ পাটি তৈরি ও বিক্রিতে জড়িত। চাহিদা কমলেও নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পাটি তৈরি করছেন অনেকে। এটি বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্প। মুর্তা বা পাটি, বেত বা মোস্তাক নামক গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের ছাল থেকে এটি তৈরি হয়ে থাকে। গ্রামে মাদুর ও চাদরের পরিবর্তে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। সাজসজ্জা করা মাদুরকে নকশিপাটিও বলা হয়।

 

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোরা ইউনিয়নের দাসপাড়া ও স্বদেশী ইউনিয়নের পিকা বন্যপাড়া গ্রামের অধিকাংশ পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। একসময় দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা অগ্রিম টাকা দিয়ে শীতলপাটি তৈরি করে নিতেন। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে বাড়ির নারীরাই তৈরি করতেন নান্দনিক পাটি।

 

এলাকাগুলোতে কয়েক দশক আগেও আয়ের প্রধান উৎস ছিল শীতলপাটি। গরমে প্রশান্তি পেতে শীতলপাটি ব্যবহার করলেও বিয়ে, গায়ে হলুদ, খতনাসহ নানা অনুষ্ঠানে এর ব্যাপক ব্যবহার ছিল। এখন তা কমে গেছে।

 

শীতলপাটির গ্রাম ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্লাস্টিক পাটির আগ্রাসনে এ পাটির কদর দিন দিন কমতে শুরু করেছে। পাটি বুনে একসময় যাদের সংসার চলত, তারা এখন এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে বিলডোরা এলাকায় এখনো শতাধিক পরিবারের নারীরা পূর্বসূরীদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। সময় ও খরচের তুলনায় দাম কম হওয়ায় এখন আর এ কাজে লাভ হয় না বলে জানান তারা।

 

পাটি তৈরির কারিগর কল্পনা রানী, নিতাই চন্দ্র সরকারসহ কয়েকজন জানান, এখানে শীতলপাটি, নামাজের পাটি ও আসন পাটি নামে তিন ধরনের পাটি তৈরি করা হয়।

 

বিলডোরা ইউনিয়নের দাসপাড়া এলাকার অঞ্জনা রানী সরকার বলেন, তারা নামাজের পাটি, সাধারণ পাটি, পিট্ট বেতির পাটি ও বোক্কার বেতির পাটি তৈরি করেন। একটি পাটি বানাতে অন্তত ৭ দিন সময় লাগে। বিছানায় ব্যবহারের একেকটি শীতলপাটি বিক্রি হয় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়। দিন দিন চাহিদা কমায় তারাও কম তৈরি করছেন।

 

একই এলাকার সোমা রানী সরকার বলেন, শীতলপাটির উৎপাদন খরচ বাড়লেও দাম বাড়ছে না। মানুষের চাহিদা দিন দিন কমছে। তবুও নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তৈরি করছেন। আগে গ্রামের হাটে পাটির কদর থাকলেও এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে আসায় গরমেও এর ব্যবহার কমেছে। এখন গাজীপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকার এসে পাটি নিয়ে যান।

 

পাটির কারিগর নেপাল চন্দ্র সরকার বলেন, অনেকে পুঁজির অভাবে কাজ কম করে। চাহিদা কমতে থাকা এবং কারিগরদের পুঁজির অভাবে এ কাজে মানুষের আগ্রহ কমতে শুরু করেছে।

 

হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা হাসান বলেন, ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্প শীতলপাটিকে টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version