-->
লক্ষীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

জরাজীর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

নিত্যানন্দ হালদার, মাদারীপুর
জরাজীর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ দুইটি ভবনে চলছে মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের ২৭নং লক্ষীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। এছাড়াও বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক, সীমানা প্রাচীরসহ রয়েছে নানা সমস্যা। তাছাড়া বৃষ্টি হলেও বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টির জন্য শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে না সমস্যায়। এতে করে বিদ্যালয় থেকে দিন দিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে একটি নতুন ভবনের দাবি তুললেও তা এখনো নির্মাণ হয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ক্লাস করতে হচ্ছে।

 

১৯৫৪ সালে মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের ২৭নং লক্ষীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৬ সালে বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন তৈরি করা হয়। এরপর ২০১৩ সালে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও সেই ভবনেই এখনো চলছে পড়ালেখা। দুটি কক্ষ থাকলেও ক্লাসরুমের সংকট থাকায় একটি রুমের মধ্যে টিনের বেড়া দিয়ে তিনটি শ্রেণি কক্ষ তৈরি করে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। ভবনের বিভিন্ন দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদ থেকেও পলেস্তারা খসে পড়ছে। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছেন।

 

এছাড়াও এই ভবনের পাশে পুরাতন ও জরাজীর্ণ একটি টিনসেট ভবন আছে। এই ভবনের তিনটি রুমে এখানো ক্লাস নিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এই বিদ্যালয়ের ঘরগুলোর অবস্থা আরো জরাজীর্ণ। দরজা, জানালা নেই ঠিকমতো। অনেক আগেই দরজা ও জানালা ভেঙে গেছে। টিনের চালও জরাজীর্ণ। বৃষ্টি হলেই শ্রেণি কক্ষের মধ্যেই পানি পড়ে। তাছাড়া বৃষ্টির পানির পাশাপাশি একটু বাতাস হলেও দরজা ও জানালার আটকানোর ব্যবস্থা না থাকায় ভেতরে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

 

তাছাড়া একটু বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয় মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জরাজীর্ণ টিনসেট ভবনের মাঝ খানের একটি ছোট কক্ষে এক সঙ্গে বসতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের দপ্তরিকেও। এছাড়াও বিদ্যালয়ের টয়লেটের অবস্থাও জরাজীর্ণ। পুরাতন হওয়ায় স্যাতস্যাতে ও নোংরা পরিবেশেই টয়লেটে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এরফলে দিন দিন শিক্ষার্থীর উপস্থিতির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে বলে জানা গেছে।

 

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের ভবনের অবস্থা অনেক খারাপ। এই ভবনের দরজা ও জানালা নেই। তাই একটু বৃষ্টি হলে আমাদের বই পত্রও ভিজে যায়। তাছাড়া বিদ্যালয়ের টয়লেটের অবস্থাও খুব খারাপ।

 

বিদ্যালয়ের চর্তুথ শ্রেণির ছাত্র তামিম বলেন, আমাদের এই টিনসেট ঘরে পড়াশুনা করতে কষ্ট হয়। বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে আমাদের বই খাতা ভিজে যায়। তাই আমাদের নতুন ভবন চাই।

 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুইটি আক্তার বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের দুটি ভবনের অবস্থা খুব খারাপ। এখানের টিনসেট ভবনটির চাল দিয়ে পানি পড়ে। তাছাড়া দরজা জানালা না থাকায় বৃষ্টির পানি ও বাতাস হলে ক্লাস করাতে সমস্যা হয়। বইপত্র সব ভিজে যায়। তাছাড়া আরেকটি ভবনের অবস্থাও খারাপ। সেখানের বিভিন্ন দেয়ালে ফাটল ও ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে। এতে করে ঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করাতে হচ্ছে।

 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাদারীপুর সদর উপজেলার প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান হাওলাদার বলেন, এই বিদ্যালয়ের ভবনের যে অবস্থা, তাতে যেকোনো মুহূর্তেই ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হতে পারে। তাই আমি অনুরোধ করব, নতুন ভবন করার জন্য। তাছাড়া বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষই জরাজীর্ণ, শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ক্লাস করতে পারছে না।

 

কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অনেক আশা নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন, সেখানে এসে যদি কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়, তার দায়ভার কে নিবেন? তাই এখানে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পাঠদানের দাবি জানাই।

 

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাজি আবুল বাসার বলেন, বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন জরুরিভাবে দরকার। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।

 

মাদারীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ করিম বলেন, মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের ২৭নং লক্ষীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। জরাজীর্ণ ভবনের কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যাতে কোনো রকমের বিঘ্ন না ঘটে এ ব্যাপারে দ্রুত বিকল্প ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে ও নতুন ভবন নির্মাণে জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version