মানিকগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে ঘুষ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যেন সোনার হরিণ। লাইসেন্স করতে আসা সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, দালালদের সঙ্গে অফিস কর্তা ব্যক্তিদের সখ্যতা থাকায় ঘুষ দিয়ে পরীক্ষায় সহজে পাস করা যায়। ঘুষ না দিলে পরীক্ষায় পাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দালালদের মাধ্যমে এ ঘুষের টাকা অফিস কর্তা ব্যক্তিদের পকেটে ঢোকে। তবে কর্তা ব্যক্তিদের দাবি, নিয়ম মাফিক সেবাপ্রার্থীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিম্ন পদস্থ কয়েকজন কর্মচারী দালাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। আর পরীক্ষার্থীকে পাস করান থেকে শুরু করে এসব ঘুষের টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ন্ত্রণ করেন ড্রাইভিং কম্পিটেন্সি টেস্ট বোর্ডের এক সদস্য।
অফিসে যে কর্মচারীর সঙ্গে যার বেশি সখ্যতা ওই দালাল তার সঙ্গে কাজ করেন। সেবাপ্রার্থীর কাছ থেকে যত টাকাই নেয়া হোক না কেন অফিসে ওই দালালকে ২ হাজার ৫০০ টাকা ঘুষ গুনতে হয়। আর এ টাকা অফিসের কর্মচারী থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের মাঝে নির্ধারিত হারে বণ্টন হয়। যেদিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, তার আগের দিন দালালরা ঘুষের টাকা পরিশোধ করে অফিসে পরীক্ষার্থীর রোল জানিয়ে দেন। পরের দিন শুধু ওই পরীক্ষার্থী লিখিত, মৌখিক, প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় উপস্থিত থাকলেই পাস করেন। ঘুষের টাকা না দিয়ে পরীক্ষায় পাস করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা খুব কম
সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে কথা হলে একাধিক দালাল বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য তারা সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। আবেদন খরচ, লার্নার, ব্যাংক ড্রাফট মিলে খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। অফিসে ঘুষের খরচ ২ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। বাকি টাকা দালালদের থাকে। জেলা শহর থেকে শুরু প্রান্তিক গ্রাম পর্যন্ত দালালরা কাজ করেন। একজন দালাল গড়ে মাসে ৫ থেকে ৭টি কাজ পান। অফিসে কর্মরতরা সেবাপ্রার্থীর ধরন বুঝে কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি টাকা নিলেও অভিযোগ এড়াতে বেশিরভাগ টাকা দালালদের হাত দিয়ে নিয়ে থাকেন।
দালালরা বলেন, এ ঘুষের টাকা হিসাব করে টপ টু বটম বণ্টন হয়। আমরা কাজ পেলে টাকা পাই। আর অফিসের লোকেদের প্রতি কাজ থেকে টাকা পাই। আর পরীক্ষার্থীকে পাস করান থেকে শুরু করে এসব ঘুষ বাণিজ্যের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন একজন ইন্সপেক্টর। তিনিই সিস্টেমে ঘুষ নেয়া পরীক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দেন। তার হাতেই সব কল-কবজা।
একাধিক সেবাপ্রার্থী বলেন, ভোগান্তি এড়াতে অনলাইন আবেদন, পরীক্ষায় পাস থেকে শুরু করে লাইসেন্স কার্ড পাওয়া পর্যন্ত মৌখিক চুক্তিতে দালালদের টাকা দেন তারা। অফিসের স্টাফদের সহযোগিতা পেলে তো তাদের দালালদের কাছে যেতে হতো না।
অফিসের উচ্চমান সহকারী শাহ মো. মোয়াবিয়া, সহকারী মোটরযান পরিদর্শক আসাদুজ্জামান পলাশ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সাজ্জাদ হোসেন, এমএসপিএলএর প্রতিনিধি মো. জাহিদ দালালদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) মাহবুব কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
ড্রাইভিং কম্পিটেন্সি টেস্ট বোর্ডের সদস্য সচিব ও মোটরযান পরিদর্শক মো. সফিকুল ইসলাম ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনিও সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) মাহবুব কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। মানিকগঞ্জ বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) মাহবুব কামালের মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত থাকায় মন্তব্য করেননি। তবে তিনি অফিসে এসে কথা বলার অনুরোধ করেন।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য