-->
শিরোনাম

শীতের আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকেরা

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
শীতের আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকেরা
সৈয়দপুরে ফুলকপি ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন কৃষক

বেশি লাভের আশায় বেশ কয়েক বছর ধরে গরমের মধ্যেই শীতকালীন সবজি চাষ করছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বেশকিছু কৃষক। এবার সারা বছরই সবজির বাজার চড়া হওয়ায় তাদের তৎপরতা আরও বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শীত আসার আগেই ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষাবাদ শুরু করে দিয়েছেন চাষিরা। চারা রোপণের ৮-১০ দিন থেকেই ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। ২-৩ দিন পর পরই কীটনাশক ও সেচ দিচ্ছেন জমিতে।

 

উপজেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আগাম শীতকালীন সবজি বাঁধাকপি, সিম, বেগুন, শশা ও ঢেড়শ বিক্রি হচ্ছে এবং এসবের দামও বেশ চড়া। এ কারণে শীতকালীন আগাম সবজির চাষাবাদ করে লাভবান হওয়ায় দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। সে কারণেই চড়া বাজারে আরও বেশি লাভের আশায় সবার আগে শীতের সবজি বাজারে তুলতে বৃষ্টিহীন আবহাওয়ায় তপ্ত দিনেও ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশ্রম করছেন সবজি ক্ষেতে।

 

উত্তর জনপদের সৈয়দপুর উপজেলার সবজি চাষে ব্যাপক সুনাম রয়েছে। উপজেলার বোতলাগাড়ী, কামারপুকুর, বাঙ্গালীপুর, কাশিরাম ও খাতা মধুপুর ইউনিয়নের কৃষকেরা শীতকালীন সবজি মুলা, ফুলকপি, বাধাকপি, সিম, টমেটো, পালংশাক, লালশাক, পুইশাক ও পেয়াজ শীত নামার আগেই বাজারে নিয়ে আসেন। এ ছাড়াও সবজি ও চারার জন্য বিখ্যাত এসব এলাকা। কৃষকরা শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি ও চারা চাষ করে সরবরাহ করেন আশপাশের জেলা ও উপজেলাতে।

 

সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সৈয়দপুরে প্রতি বছর শীতকালীন সবজির ভালো চাষ হয়ে থাকে। এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় চারা ভালো হয়েছে। শীত আসার এখনো দেরি থাকলেও এখনই সবজি চাষিরা আগাম সবজি চাষ শুরু করে দিয়েছেন। এ বছর উপজেলায় ৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১০ থেকে ১১ হাজার টন ফসল উৎপাদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

 

উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের শ্বাস কান্দর এলাকার রেজাউল প্রতি বছর আগাম সবজি চাষ করেন। এবার দুই বিঘা জমিতে আগাম ফুলকপি লাগিয়েছেন ও দিন রাত পরিশ্রম করছেন। ফুলকপি পরিপূর্ণ হতে আরও বেশকিছু দিন সময় লাগবে।

 

তিনি জানান, আগাম সবজি চাষ কষ্টসাধ্য হলেও দ্বিগুণ লাভ হয়। এবার ৪ টাকা দরে চারা কিনে রোপণ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে সবজি চাষের জন্য খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। খরার জন্য ফলন হতে একটু দেরি হলেও লাভ ভালো হবে বলে জানান এই কৃষক।

 

খাতামধুপুর ইউনিয়নের খালিশা গ্রামের কৃষক আজম আলী জানান, তিনি প্রত্যেক শীতে ৩ বার শীতকালীন সবজি চাষ করেন। চারা থেকে বাজারে তোলার উপযোগী ফুলকপি চাষ করতে ২ মাস সময় লাগে। ইতিমধ্যে ১০ শতক জমির আগাম ফুলকপি ৩৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। এখন আরও ২০ শতক জমির ফুলকপি তৈরি হচ্ছে বাজারে যাওয়ার জন্য। আগাম শীতকালীন সবজি যার যত বেশি আগে বাজারে আসবে সে তত লাভবান হবে।

 

কামারপুকুর ইউনিয়নের বাগডোকরা গ্রামের নারী কৃষক নাজমা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতি বছর শীতকালীন সবজি গরমের মধ্যে চাষ করে বেশ আয় করে থাকেন। তার জমিতে সিম, টমেটো, মরিচ, বেগুন, ফুলকপি রোপণ করে পরিচর্যা করে যাচ্ছেন নিয়মিত। আবহাওয়া ভালো থাকলে সবজি বাজারে তুলতে পারবেন চলতি মাসের শেষ দিকে।

 

বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের বড়দাহ গ্রামের কৃষক আহাদ জানায়, এবারে শীত মৌসুমের আগেই প্রায় ৩ বিঘা জমিতে ফুলকপি ও ২ বিঘা জমিতে বাঁধাকপির চারা রোপণ করেছেন। প্রায় ৫০-৬০ দিন পর ফুলকপি ও বাঁধা কপি বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে অনেকেরই কাজ থাকে না। জমিও পড়ে থাকে প্রায় ২ মাস। এ কারণে আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষাবাদ করেছেন। এতে একদিকে যেমন বেশি দামে এসব বিক্রি করতে পারবেন অন্যদিকে বেকার থাকা মানুষরাও মজুরি পেয়ে যাচ্ছেন।

 

ওই ইউনিয়নের পোড়ার হাট এলাকার কৃষক সামাদ ২ বিঘা জমিতে ফুলকপি, ১ বিঘা জমিতে ঢেড়শ, ৫ কাঠা জমিতে বেগুন ও ১ বিঘা জমিতে করলা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে গত বছর থেকে আগাম শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করে অনেক লাভবান হয়েছি। এবারো যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে ২ লাখ টাকারও বেশি লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধিমান ভূষণ বলেন, অনেক কৃষক বেশি লাভের আশায় আগাম সবজি চাষ করেন। এখন এই উপজেলাতে যে সবজি চাষ হচ্ছে তা রবি মৌসুম শুরুর আগেই করে থাকে কৃষকরা। সবজি চাষে ফলন ভালো হয়। সাধারণত কার্তিক মাসে শীতকালীন সবজির চাষ শুরু হয়। এ বছর ৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে আবাদকৃত এসব সবজি ইতোমধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করে দিয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version