আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে স্থানীয় সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু ও নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশিরা একাট্টা হয়েছেন। নানা বিষয় নিয়ে স্থানীয় এমপির সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চলছে।
সম্প্রতি নাগরপুর কলেজ মাঠে জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। আহসানুল ইসলাম টিটু নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে ওই জনসমাবেশের আয়োজন করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি এবং জেলার ৫ জন দলীয় এমপির উপস্থিতিতে ওই জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম উইলিয়াম সমাবেশে সভাপতিত্ব করেননি। সাধারণ সম্পাদক কুদরত আলী সভা পরিচালনার দায়িত্বও পালন করেননি। ১ থেকে ৮ নম্বর সহ-সভাপতি এবং দুই জন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকও সমাবেশে অনুপস্থিত ছিলেন। তারা দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতাদের দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছে। জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে সেই দ্বন্দ্ব এখন ‘তপ্ত কড়াইয়ে ঘি’ ঢালার অবস্থা হয়েছে। সেই সঙ্গে এ আসনের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তারেক শামস খান হিমু ও ইনসাফ আলী ওসমানী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম উইলিয়ামের সঙ্গেও দ্বন্দ্ব রয়েছে।
দুই পক্ষের ওই দ্বন্দ্বের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় দলীয় কর্মসূচি, সংসদ সদস্য তার নিজের অনুসারীদের নিয়ে পালন করেন। অন্যরা উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে আলাদাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নাগরপুরে জনসমাবেশ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সমাবেশ করার জন্য প্রস্তাব দেন। তারা এই প্রস্তাবের কথা আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের জানান।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ২ নম্বর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নাজমুল হক তপন, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক বিএমএম জহুরুল আমিন, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক দিলদার আহাম্মেদ, দপ্তর সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহালম মিয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খালিদ হোসেন জানান, ওই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে সমাবেশের তারিখ নির্ধারণ করেন।
তিনি কারও সঙ্গে সমন্বয় না করে একাই সমাবেশের প্রচারণা শুরু করেন। তখন অন্য সবাই এ সমাবেশ বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন। ওই সভায়ও উপজেলা আওয়ামীলীগের ৯ নম্বর সহ-সভাপতি সভাপতিত্ব করেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ধারণা করেছিলেন, প্রস্তুতি সভায় উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সংসদ সদস্য উদ্ভুত পরিস্থিতির সুষ্ঠু সমাধান করবেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুদরত আলী জানান, সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে রোববার যে সমাবেশ হয়েছে তার সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পর্ক নেই। তিনি কারও সঙ্গে সমন্বয় করেননি। এমপি হওয়ার পর থেকে তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের এড়িয়ে চলতে থাকেন। তিনি বিএনপি ও জামায়াতের লোকদের বগলদাবা করে রাজনীতি করছেন। কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাদের ম্যানেজ করে তিনি এই সমাবেশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম খান অপু জানান, রোববারের সমাবেশ যারা বয়কট করেছেন, তারা দলীয় শৃঙ্খলা মানেননি। সংসদ সদস্য সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করতে চান। কিন্তু যারা সমাবেশে আসেননি তারা কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং জেলা আওয়ামী লীগকে অবজ্ঞা করেছেন।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তারেক শামস খান হিমু জানান, দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করবে দল। আওয়ামী লীগ আর সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড চালাবে সংসদ সদস্য। কিন্তু আহসানুল ইসলাম টিটু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমন্বয় না করে ইচ্ছেমতো কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে সকল কর্মকান্ড চালান।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য