ইজারার শর্ত অমান্য করে কালিগঙ্গা নদীতে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে হুমকিতে রয়েছে কালীগঙ্গা নদীর দুই পাশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ব্রিজ, হাসপাতাল, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলনে ইতিমধ্যে শত শত হেক্টর কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সর্বহারা হয়ে পড়েছে ৩ গ্রামের হাজারো পরিবার।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, একটি প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী চক্র ইজারার নামে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে কালীগঙ্গা নদীর বিভিন্ন স্পট থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে অভিযান করা হলেও তা বন্ধ হয়নি।
সম্প্রতি জেলার পৌর এলাকার বেউথা বালু মহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। এই বালু মহালেরই ইজারা পেয়েছেন মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম। মানিকগঞ্জে ইজারার নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে কালিগঙ্গা নদীতে ড্রেজারে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। প্রতিদিন ৬টি ড্রেজার দিয়ে নদী পাড়ের কৃষিজমি ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে করে চরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হবার পাশাপাশি তীরবর্তী পৌলি, আন্দারমানিক, চর বেউথা গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করছে।
স্থানীয়রা জানান, বালু মহলের ইজারা নিয়ে ৩ গ্রামের শত শত কৃষি জমি কেটে নিচ্ছে প্রভাবশালী নেতারা। অতিরিক্ত বালু পাবার লোভে নদীর চর ঘেঁষে বালু উত্তোলন শুরু করে ইজারাদার। এমনকি সুযোগ বুঝে ড্রেজার লাগিয়ে চর বেউথা, আন্দারমানিক, পৌলি চরের ফসলি জমির মাটি কেটে নিতে থাকে। এতে কৃষকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ছাড়া ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে ফেলার কারণে চরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে নদীর তীরবর্তী চর বেউথা, আন্দারমানিক, পৌলি গ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে গ্রামবাসীর মনে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পৌর এলাকার কালীগঙ্গা নদীতে কৃষকের ফসলি জমি ঘেঁষে ৬টি ড্রেজারের সাহায্যে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই চরের বিশাল অংশের ফসলি জমি কেটে ফেলা হয়েছে। কাটা অংশে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি ড্রেজার প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করে। সে হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলিত হচ্ছে। এভাবে চর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করতে থাকলে খুব অল্প সময়েই চরের একটি অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে তীরবর্তী গ্রাম হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিবছর ধান, ভুট্টা, পাট, গম, সরিষাসহ নানা জাতের ফসল হতো এসব তিন ফসলি জমিতে।
চর বেউথা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, আমাদের ৩ গ্রামের ফসলি জমি কেটে নিচ্ছে বালু ব্যবসায়ীরা। সর্বহারা করে দিচ্ছে আমাদের পরিবারকে। আমাদের সেচ প্রকল্পের অর্ধেক জমি কেটে নিয়ে গেছে। এখন আমাদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় এসেছে। আমরা এই অবৈধ বালুকাটা বন্ধের দাবিতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছি। তবুও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধভাবে বালুকাটা।
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমিরুল ইসলাম আক্কাস বলেন, প্রভাবশালী নেতারা ইজারার নামে আমাদের কৃষিজমি কেটে নিচ্ছে। যে জমিতে আমরা ইরি, ভুট্টা, পাটসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম সেই জমি এখন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এ ছাড়া আমাদের রয়েছে জোসেফ মেমোরিয়াল হসপিটাল, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং স্বপ্নের কালিগংগা ব্রিজ। এখন এসব স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলনের ফলে ৩ গ্রামের শত শত বিঘা কৃষিজমি নদীগর্ভে চলে গেছে। কৃষিজমি হারিয়ে এখন আমরা সর্বহারা। অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
বেউথা বালু মহালের ইজারাদার মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারকে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে বালু মহাল ইজারা নিয়েছি। নদী সিকস্তি জায়গায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছি। অবৈধভাবে কোনো জায়গায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতিশ্বর পাল বলেন, ইতিমধ্যে ওই এলাকায় অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে অভিযান করা হয়েছে। শিগগিরই খোঁজখবর নিয়ে আবারো অভিযান চালানো হবে। এসব ব্যাপারে জানতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য