-->
শিরোনাম
পার্বতীপুর রেলওয়ে হাসপাতাল

১৫ হাজার মানুষের চিকিৎসায় একমাত্র ভরসা ফার্মাসিস্ট

পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
১৫ হাজার মানুষের চিকিৎসায় একমাত্র ভরসা ফার্মাসিস্ট
দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে হাসপাতাল

বাংলাদেশ রেলওয়ের বৃহত্তম চার লাইনের জংশন দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশন। পশ্চিম অঞ্চলে রেলওয়ের একমাত্র কেন্দ্রীয় লোকোমটিভ কারখানা (কেলোকা) ছাড়াও ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ডিপো, রেলওয়ে লোকো সেডসহ ডিজেল ওয়ার্কশপের অবস্থান পার্বতীপুরে। এখানে কর্মরত বিভিন্ন দপ্তরের রেল কর্মকর্তা, শ্রমিক, কর্মচারীসহ প্রায় ১৫ হাজার রেল পরিবার সদস্যের চিকিৎসা সেবার বিপরীতে রয়েছে ১৬ শয্যা বিশিষ্ট ১টি মাত্র রেলওয়ে হাসপাতাল।

 

নানা সংকটের মুখে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে একমাত্র হাসপাতালটি। রেলওয়ের সংশ্লিষ্টদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় প্রতিনিয়তই ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল কিংবা স্থানীয় বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হচ্ছেন সুবিধাবঞ্চিত এসব রেল কর্মচারী। দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসক না থাকায় বহিরাগত রোগীদের একমাত্র ভরসা ফার্মাসিস্ট রোমজান আলী।

 

লোকবল না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদানের পাশাপাশি একাই সামলান আউটডোরের সকল কার্যক্রম। এতে হাসপাতালের অন্য কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

 

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বৃটিশ আমলে নির্মিত পার্বতীপুর রেলওয়ে হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত পদে সহকারী বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার ১ জন, সহকারী সার্জন ২ জন, ফার্মাসিস্ট ২ জন, সিস্টার ইনচার্জ ১ জন, সিনিয়র নার্স ৩ জন, জুনিয়র নার্স ১ জন, ড্রেসার ১ জন, ওয়ার্ড এটেনডেন্ড ৬ জন, ওষুধ ক্যারিয়ার (এমসি) ১ জন, বাবুর্চি ১ জন, মশালাচি ১ জন, আয়া ২ জন, নিরাপত্তা প্রহরী ২ জন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ৫ জন কর্মরত থাকার কথা।

 

তবে, ১৪ টি পদে ২৯ জনের বিপরীতে ১ জন ফার্মাসিস্ট, ১ জন সিস্টার ইনচার্জ, ২ জন সিনিয়র নার্স, ১ জন জুনিয়র নার্স, ১ জন ওয়ার্ড এটেনডেন্ট, ১ জন আয়া ও ৪ জন পরিচ্ছন্নকর্মীসহ ১৩ জন লোকবল নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম। এদিকে, নিরাপত্তা প্রহরীর মঞ্জুরিকৃত ২টি পদ শূন্য থাকায় হাসপাতালের ওষুধ ও মূল্যবান চিকিৎসা উপকরণ যেকোনো সময় চুরির আশংকা রয়েছে।

 

চিকিৎসা নিতে আসা রেল পরিবারের সদস্য জাকির হোসেন বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসেছি। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ ডাক্তার না থাকায় আমার মতো অনেকে এভাবে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে ক্লিনিকে ৫শ’ টাকা ফি দিয়ে ডাক্তার দেখাতে হচ্ছে। স্থায়ী ডাক্তার নিয়োগসহ সকল সমস্যা সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

 

সেবা নিতে আসা ক্যারেজ স্টাফ আব্দুল আলিম বলেন, আগে হাসপাতালে নিয়মিত ডাক্তার বসতেন। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে এখানেই ভর্তি করাতাম। এখন ডাক্তার নেই। আগের মতো সেবাও পাই না। গুরুতর অসুস্থ কাউকে এখানে আনলে বাইরে পাঠায় তারা। তাই এখানে না এনে সরাসরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায় সবাই।

 

রাবেয়া বাসরী নামে আরেক জন বলেন, আমার বাবা আব্দুর রহমান ক্যারেজে চাকুরি করতেন। আগে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি চারপাশে ফুলের গাছ, ঝর্ণার পানিতে মাছসহ নয়নাভিরাম পরিবেশ ছিল। এখন সবই স্মৃতি।

 

ফার্মাসিস্ট রোমজান আলী জানান, পার্বতীপুরে কর্মরত রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এই হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় রয়েছে একটি সরকারি ফার্মেসি। কেলোকায় কর্মরত ছাড়া তাদের পরিবারসহ প্রায় ৫০০-৬০০ মানুষ প্রতিমাসে এ হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে থাকে। দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে স্থায়ী কোনো চিকিৎসক না থাকায় বাধ্য হয়েই তারা বাইরে যাচ্ছেন। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ব্যথা, আহতসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

 

ওষুধ থাকলেও রোগ নির্ণয়ের জন্য তাদের বাইরে ডাক্তার দেখাতে হয়। এক সময় হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার থাকলেও বর্তমানে প্রয়োজনীয় লোকবল ও চিকিৎসা উপকরণের অভাবে দীর্ঘ কয়েক যুগ যাবৎ তা নেই। ফলে গুরুতর রোগী এলে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা রংপুর মেডিকেলে পাঠানো হয়। ওষুধ দেয়ার পাশাপাশি আউট ডোরের সকল কার্যক্রম আমাকে একাই সামলাতে হয়।

 

লালমনিরহাটের বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা: মাহফুজ ইফতেখার ভুঁইয়া বলেন, জনবল সংকটের কারণে পার্বতীপুর রেলওয়ে হাসপাতালে ৩ জন চিকিৎসকের বিপরীতে একজনও নেই। পশ্চিম যোনের তিস্তামুখ ঘাট, বোনারপাড়া ও পার্বতীপুরকে দেখতে হয় আমাকে। তবে অফিসিয়াল কাজের চাপ সামলানোর পাশাপাশি অনেক সময় পার্বতীপুরে যাওয়া হয়না। তবে গুরুতর রোগী এলে ফার্মাসিষ্টরা ফোনে পরামর্শ নেন। সংকট নিরসনে রেল ভবন কর্তৃক চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন।

 

দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন হলে এ সমস্যার সমাধান হবে। রেল দপ্তরের কর্মকর্তা, শ্রমিক কর্মচারীসহ স্থানীয় সচেতন মহল পার্বতীপুর রেলওয়ে হাসপাতালে সকল সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version