আইন অমান্য করে অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর যত্রতত্র গড়ে ওঠা স্থাপনার কারণে দেবে যাচ্ছে সেন্টমার্টিন। সংকুচিত হয়ে আসছে এই দ্বীপের আয়তন। গত এক যুগে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২০-২৫ একর সৈকত বেলাভ‚মি সাগর গর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।
প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করে গিলে খাচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে। পরিবেশবাদী ভূতত্তবিদদের মতে-সমুদ্রের ওপর ভেসে উঠা দ্বীপটি এত ভার সহ্য করতে পারছে না। এ কারণে এখনই যদি দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ করা না যায় তবে সেন্টমার্টিন সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
স্বচ্ছ পানি ও চারপাশজুড়ে প্রবাল পাথরবেষ্টিত নারিকেল জিঞ্জিরায় অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকদের যাতায়াত, তাদের অসচেতনতা, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ ও পরিবেশ দূষণের কারণে সেখানকার পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, সেন্টমার্টিনে যেকোনো ধরনের স্থাপনা গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করে গড়ে উঠছে একের পর এক রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্ট। এসব অব্যবস্থাপনার কারণে দ্বীপটির পরিবেশ ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে দ্বীপের শৈবাল-প্রবাল, ঝিনুক, শামুক, সামুদ্রিক কাছিম, লাল কাঁকড়াসহ নানা ধরনের জলজ প্রাণী। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়েছে গত ১০ বছরে এক থেকে দেড় ফুট।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) বলছে, সেন্টমার্টিনে অপরিকল্পিত স্থাপনা বন্ধে সরকারিভাবে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কোনো অব্যবস্থাপনামূলক স্থাপনা যেন দ্বীপে না হতে পারে সে ব্যাপারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গেজেটও তৈরি করা হয়েছে।
কউক চেয়ারম্যান কমডোর মোহাম্মদ নুরুল আবছার বলেন, গবেষণা করে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত সেন্টমার্টিন দ্বীপে যথেষ্ট অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি হয়েছে। যার কারণে দ্বীপটি ধীরে ধীরে মাটির নিচে দেবে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আর এ ধরনের কোনো স্থাপনা করতে না দেয়ার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও কউকের সমন্বয়ে আমরা একটি গেজেট বের করেছি।
এদিকে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, সেন্টমার্টিন সাগর গর্ভে তলিয়ে গেলে প্রতিবেশী মিয়ানমার সরকারের সাথে আমাদের জল ও স্থল সীমা নিয়ে নতুন করে বিরোধ দেখা দিতে পারে। তাই সেন্টমার্টিন ভূখন্ডের ওপর আর কোনো স্থাপনা নয়। দ্বীপের পরিবেশ সংরক্ষণ করে পর্যটক গমনাগমন করা এখন সময়ের দাবি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য