শহরের প্রধান সড়কগুলোতে খানাখন্দ আর সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরবাসী। রাস্তা নয়, এ যেন মাছ চাষের পুকুর। পৌরসভার প্রায় ৮০ ভাগ রাস্তা নষ্ট। ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারে নাজুক। এসব দেখার কেউ নেই।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে পথচারীদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। হাঁটুপানিতে রাস্তা তলিয়ে থাকায় খানাখন্দে দুর্ঘটনায় পড়ছে যানবাহনসহ পথচারীরা। শুক্রবার ভোরে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে খানাখন্দে ভরা (ভাঙা) রাস্তাগুলো। শহরের প্রাণকেন্দ্র হলো শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক। এই সড়ক মদীনা মোড় থেকে বিএনপি অফিস পর্যন্ত চলাচলের অনুপযোগী। ব্যস্ততম সড়ক হওয়ায় খানাখন্দের কারণে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু চত্বর, শহীদ তুলশীরাম সড়কসহ শহীদ জহুরুল হক সড়ক পর্যন্ত হাঁটুপানি। ফলে দীর্ঘ এলাকাজুড়ে যানজট বিরাজ করায় পথচারীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। একই অবস্থা শহীদ শামসুল হক সড়কের মাছবাজার থেকে থ্যাংকস ক্লথ স্টোর মোড় পর্যন্ত। শেরেবাংলা সড়কের তামান্না মোড় থেকে ওয়াপদা মোড় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা যেন পুকুরে পরিণত হয়েছে।
জনদুর্ভোগের অপর নাম তামান্না ও ওয়াপদার মোড়। এই পরিস্থিতিতে সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে হাঁটুপানি জমে থাকে। এ সময় কোনো যানবাহন চলাচল করলে পানি গড়িয়ে দুই পাশের দোকান ও বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে। নোংরা পানি ও কাদা মাড়িয়ে ক্রেতারা ওইসব দোকানে যাতায়াত করতে পারে না। এ ছাড়াও স্থানীয় লোকজন বাসাবাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না। এতে দুর্ভোগে পড়েছে ক্রেতা, পথচারী ও বাসাবাড়ির লোকজন।
শহীদ শামসুল হক সড়কের তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সৈয়দপুর পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা দীর্ঘ তিন বছরে কোনো কাজই করেননি। বিশেষ করে শহরের প্রধান সড়কগুলোর মেরামতসহ পানি নিষ্কাশনে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি। ড্রেনেজ অবস্থা এতটা অচল যে, ১০ মিনিটের বৃষ্টির পানি ঘণ্টার পর ঘণ্টা গেলেও সরে না। আর যদি দিনভর বৃষ্টি হয়, তাহলে দিনের পর দিন হাঁটুপানি জমে থাকে। যেন মাছ চাষের পুকুর। জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন এসব দেখে না। কী যে দুর্ভোগ বলার ভাষা নেই।’
পৌরসভার বাঁশবাড়ী এলাকার আয়মান আলী বলেন, ‘পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের সিংহভাগ সড়কই চলাচলের অযোগ্য। মুন্সিপাড়া, বাঁশবাড়ী, মিস্ত্রিপাড়া, হাতিখানা এলাকার রাস্তাগুলোতে বছরের অধিকাংশ সময় পানি জমে থাকে। বর্ষাকালে যা বন্যায় রূপ নেয়। শুকনা মৌসুমেও ড্রেনের ময়লাযুক্ত নোংরা ও দুর্গন্ধময় পানি বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে। এতে যাতায়াত ভোগান্তিসহ ঝুঁকির মধ্যে পরিবার নিয়ে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে পৌরবাসী।’
মেহের হোসেন নামের এক এনজিও কর্মী বলেন, ‘সৈয়দপুর ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত একটি পরিকল্পিত ও সুপরিচ্ছন্ন শহর। কিন্তু কিছুদিন হলো যত্রতত্র বস্তি গড়ে ওঠায় এবং প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত না করায় অত্যন্ত নোংরা ও দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এজন্য পৌর কর্তৃপক্ষ দায়ী। বিশেষ করে ডাস্টবিনের অভাবে সড়কের ময়লা আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কারে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, রাস্তাগুলো সময়মতো মেরামত না করায় দিনের পর দিন জনদুর্ভোগে বেড়েছে। সেইসঙ্গে যানজটে নাকাল পৌরবাসীর জীবন। পৌর মেয়র জনদুর্ভোগ দূর করতে ব্যর্থ হওয়ায় বসবাস অযোগ্য শহরে রূপ নিচ্ছে সৈয়দপুর পৌরসভা।’
সৈয়দপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুর ইসলাম বাবু বলেন, ‘পৌর নির্বাচনের সময় আমরা ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেছিলাম। পৌর ভোটাররা আমাদের কথা রেখেছে এবং ভোট দিয়ে বেবীকে মেয়র নির্বাচিত করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, গত তিন বছরে সৈয়দপুর শহরে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে নাই, বরং রাবিশ দিয়ে (৩নং ইট) শহরের প্রধান প্রধান সড়ক সংস্কার করেছেন তা এখন দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে।’
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবীকে তার মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার কোনো মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য