-->
শিরোনাম

তিস্তার গর্জনে চাপা পড়ছে অসহায় মানুষের কান্না

রংপুর ব্যুরো
তিস্তার গর্জনে চাপা পড়ছে অসহায় মানুষের কান্না
তিস্তার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।ছবিটি গঙ্গাচড়ার বিনবিনা চর থেকে তোলা

আবারো ভাঙনের সুর শোনা যাচ্ছে তিস্তাপাড়ে। রংপুরের কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের বসতভিটা ও ফসলি জমিসহ গাছপালা বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীতে। আর তিস্তার তর্জন-গর্জনের নিচে চাপা পড়ছে অসহায় মানুষের কান্না। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও তিস্তাপাড়ের মানুষের দুর্ভোগের কোনো সমাধান হয়নি।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাউনিয়া উপজেলার গনাই, পাঞ্চর ডাঙ্গা, ঢুষমারা, আরাজি হরিশ্বর, চর গণাই, তালুক শাহবাজ, হযরত খাঁ, হরিচরণ শর্মা গ্রামের শতাধিক পরিবারের বসতবাড়িসহ কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি, বাঁশঝাড়, গাছপালা, গোয়ালঘর নদীতে চলে গেছে। নদীভাঙন আতঙ্কে প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে এখানকার বাসিন্দাদের।

 

কাউনিয়া উপজেলার হরিচরণ শর্মা গ্রামের কৃষক মতিউর রহমানের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, নদীভাঙন আতঙ্কে অনেকেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। প্রতি রাতেই মনে হয়, এই বুঝি নদী গিলতে এলো সব। গঙ্গাচড়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। এই ইউনিয়নগুলোর মধ্যে সদর ইউনিয়নের গান্নারপাড় ও লক্ষীটারি ইউনিয়নের শংকরদহ গ্রামের অবস্থা ভয়াবহ। আগে শংকরদহ গ্রামে ৫০০ থেকে ৬০০ পরিবার বসবাস করত; কিন্তু নদীভাঙনের কারণে ভিটামাটি হারিয়ে এলাকা ছেড়েছে ২৫টি পরিবার ছাড়া বাকি সবাই।

 

গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের গান্নারপাড় গ্রামের কৃষক রাজ্জাক মন্ডল বলেন, ‘হামার আবাদি জমি, ভিটাবাড়ি, গরু-ছাগল সোউগ তিস্তা গিলি খাইছে। এলা মোক মানুষের ভিটাত থাকি কাম করি খাওয়ার নাগচল। সরকার কেন যে হামার গুলার ব্যবস্থা নেয়চোল না।’

 

লক্ষীটারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি বলেন, বিনবিনা থেকে শংকরদহ পর্যন্ত বেড়িবাঁধ দেয়া খুবই প্রয়োজন। এই বেড়িবাঁধ দিলে তিস্তার ভাঙন থেকে মুক্তি পেত মানুষ।

 

রংপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আখিনুজ্জামান বলেন, তিস্তার ভাঙন এখন বাম তীরে। সেই ভাঙনের স্থায়ী সমাধানের জন্য সম্ভাব্য ব্যয়ের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এটির অনুমোদনও হয়ে গেছে। শিগগিরই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিদুল হক বলেন, ‘ইতোমধ্যেই ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। এলাকার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি ভাঙন মোকাবিলার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও লেটার দিয়েছেন। এ ছাড়া ভাঙন মোকাবিলার জন্য রংপুর পাউবো কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে।’

 

‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নদী তিস্তার সঙ্গে অন্যান্য অনেক নদীর সম্পর্ক রয়েছে। আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। সম্প্রতি রংপুরে জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে উত্তরের কোটি মানুষ উপকৃত হবে।’

 

তিনি আরও বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন উত্তরাঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, তেমনি শত শত পরিবারের ধনসম্পদ রক্ষা পাবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version