বৃষ্টিতে চারিদিকে পানি থৈ থৈ। অথচ কোথাও সুপেয় বা নিত্যব্যবহার্য পানি নেই। পানির তীব্র সংকটে ভুগছে নগরীর উপকূল এলাকার বাসিন্দারা। বিশেষ করে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকায় পানি সংকট সবচেয়ে বেশি। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে উপকূলীয় এলাকার বেশিরভাগ নলকূপ এখন অকেজো।
এর মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় ওয়াসার নতুন লাইন স্থাপন করা হলেও পানি সরবরাহ নেই। বিভিন্ন স্থানে স্থানীয়রা গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানি উত্তোলন করলেও লবণাক্ততা ও অতিরিক্ত মাত্রার আয়রনের কারণে সে পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। সুপেয় পানির পাশাপাশি নিত্যব্যবহার্য কাজে ব্যবহৃত পানিরও চরম সংকট এসব এলাকায়।
একসময় এলাকার জলাশয়গুলোর স্বচ্ছ পানি এখানকার মানুষের পানির চাহিদা মেটাতো। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ পুকুর ও জলাশয় ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এরমধ্যে কিছু পুকুর ও ডোবা থাকলেও সেগুলো সংস্কারের অভাবে ব্যবহার অযোগ্য। ফলে এলাকার সাধারণ মানুষকে পানির জন্য অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
নগরীর উত্তর কাট্টলী উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দা ৪০ বছর বয়সি রাখাল দাস। কাজ করেন একটি পোশাক কারখানায়। প্রতিদিন রাত আটটার দিকে বাসায় ফিরে ছুটতে হয় সুপেয় পানির জন্য। প্রায় অর্ধ কিলোমিটার দূরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির বসানো গভীর নলকূপ থেকে খাবার পানি নিয়ে আসতে হয় তাকে।
তিনি বলেন, পানি কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। পানির অন্য কোনো উৎসও নেই। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিদিন এভাবে ছুটতে হয়। তিনি আরো বলেন, তার মতো আরো একশ’রও বেশি পরিবার এই নলকূপের পানি ব্যবহার করে। মাঝে মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে সে অপেক্ষা আরো বেড়ে যায়। আর নলকূপ নষ্ট হলে মাঝে মধ্যে পুকুরের ময়লা পানি সিদ্ধ করে পান করতে হয়।
উত্তর কাট্টলী, দক্ষিণ কাট্টলী ও হালিশহরের উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের কাছে পানির এ সমস্যা বেশ প্রকট। এদের মধ্যে সামর্থ্যবানরা বিকল্প হিসেবে জারের পানি কিনে ব্যবহার করলেও বেশিরভাগ মানুষের কাছে পানির বিকল্প কোন উৎস নেই। কিছু কিছু জায়গায় ওয়াসার নতুন লাইন স্থাপন করা হলেও তাতে পানি সরবরাহ নেই।
কাট্টলী মাদরাসা সড়ক এলাকার বাসিন্দা মো. শাহেদ বলেন, নতুন লাইন স্থাপনের পর থেকে গত তিন বছর ধরে নিয়মিত ওয়াসার বিল দিয়ে আসছি। কিন্তু সপ্তাহে এক দিনও পানির দেখা পাই না। দক্ষিণ কাট্টলী বিশ্বাস পাড়া এলাকার বাসিন্দা রূপন কুমার সেনগুপ্ত বলেন, নতুন লাইন স্থাপনের ফলে বেশ কিছু দিন পানি সরবরাহ ছিল। কিন্তু এখন সপ্তাহে এক বা দুই দিন পানি আসে। মাঝে মধ্যে তাও আসে না।
একসময় উপকূলীয় এলাকায় বাসিন্দাদের নলকূপের পাশাপাশি পানির অন্যতম উৎস ছিল পুকুর ও দীঘি। কিন্তু অতিরিক্ত নগরায়ণের ফলে বেশির ভাগ জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে।
উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা জানান, এখনো এ এলাকায় অনেক জলাশয় থাকলেও তা ব্যবহার অযোগ্য। বর্তমানে পুকুর বা জলাশয় ভরাটের অনুমতি নেই। তাই এসব জলাশয় সংস্কারে উদ্যোগ নিলে এখানকার পানির চাহিদা অনেকটা মিটে যাবে। ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ড. নেছার উদ্দিন মঞ্জু বলেন, ঈশান মহাজন রোড, কলেজ রোড, আলীর হাট মক্কী মসজিদ রোড, এই তিনটি সড়কে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ওয়াসার সংযোগ থাকলেও পানি পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সময়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানানো হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
জলাশয় সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেশিরভাগ জলাশয় ব্যক্তি মালিকানাধীন। তারা না চাইলে চসিকের পক্ষ থেকে এসব সংস্কার করা সম্ভব নয়।
১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইসমাইল বলেন, পানি সংকট রয়েছে পুরো এলাকায়, তবে পাঠান পাড়া এলাকায় এই সংকট সবচেয়ে বেশি। ওয়াসার নতুন প্রকল্প পুরোপুরি কার্যকর হলে এ সংকট হয়তো কেটে যাবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য